পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (পঞ্চম সম্ভার).djvu/১৭৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দেনা-পাওনা লোকটি কহিল, আর ত দেখা হবে না বাৰু, আমি পাচদিন আছি, কাল সকালেই চলে যেতে হবে। চলে যেতে হবে ? কিন্তু এই যে বললে তোমার প৷ সারেনি, তুমি হাটতে পারে না । সে কহিল, মায়ের মন্দির এখন রাজাবাবুর। হুজুরের হুকুম, তিনদিনের বেশি আর কেউ থাকতে পারবে না । জীবানন্দ হাসিয়া কহিল, ভৈরবী এখনও যায়নি, এরই মধ্যে হুজুরের হুকুম জারি হয়ে গেছে! মা চণ্ডীর কপাল ভাল! এই বলিয়া হঠাৎ তাহার একটা কথা মনে পড়িয়া ব্যগ্র হইয়া জিজ্ঞাসা করিল, আচ্ছা, আজ অতিথিদের সেবা হলো কিরকম ? কি খেলে ভাই ? সে কহিল, যারা তিনদিন আসেনি তারা সবাই মায়ের প্রসাদ পেলে । আর তুমি ? তোমার ত তিনদিনের বেশি হয়ে গেছে ? লোকটি ভালমানুষ, সহসা কাহারও নিন্দা করা স্বভাব নয়, বলিল, ঠাকুরমশাই কি করবেন, রাজাবাবুর হুকুম নেই কি-না। তাই হবে! বলিয়া জীবানন্দ একটা নিশ্বাস ফেলিয়া চুপ করিল, খুব সম্ভব অনাহূত যাত্রীদের সম্বন্ধে পূৰ্ব্ব হইতেই এমনি একটা নিয়ম ছিল, কিন্তু ষোড়শী তাহা মানিয়া চলিতে পারিত না। এখন তারাদাস এবং এককড়ি নন্দী উভয়ে মিলিয়া জমিদারের নাম করিয়া সে ব্যবস্থা অক্ষরে অক্ষরে প্রবর্তিত করিবার চেষ্টা করিয়াছে। এই যদি হয়, অভিযোগ করিবার খুব বেশি হেতু নাই, কিন্তু মন তাহার কোনমতেই এ-কথা স্বীকার করতে চাহিল না। অন্তর হইতে সে ধার বার কহিতে লাগিল, এমন হইতেই পারে ন! এমন হইতেই পারে না ! বুভুক্ষকে আহার দিবার, আবার বিধি-ব্যবস্থা কি ! ওই যে ক্ষুধাৰ্ত্ত অতিথি ওইখানে অনাহারে বসিয়া রহিল, কে তাহার বাধিয়া ব্ৰাখিবে ইহার কোন আইন-কাহনে ? কহিল, ওহে ভাই, কাল আবার আমি আসব, কিন্তু চুপি চুপি চলে যেতে পারবে না, তা বলে যাচ্চি । কিন্তু ঠাকুরমশাই যদি কিছু বলেন ? জীবানন্দ কহিল, বললেই বা এত দুঃখ সইতে পারলে আর বামুনের একটা কথা সইতে পারবে না? ধীরে ধীরে বাহির হইয়া যাইতেছিল, হঠাৎ মন্দিরের বরাদার নামের আড়ালে মানুষের চাপাগলা শুনিয়া বিক্ষিত হইল। প্রথমে মনে করিল, নিতৃতে কেহ আরাধনা করিতে আসিয়াছে, কিন্তু কথাটা তাহার কানে গেল । কে একজন বলিতেছে, আমাদের মায়ের সর্বনাশ যে করেচে তার সর্বনাশ না করে আমরা কিছুতে ছাড়ব না বলে দিচ্চি। § ot