পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (পঞ্চম সম্ভার).djvu/১৮৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ সেই-সব মনশ্চক্ষে উপলব্ধি করিয়া বহুক্ষণ পৰ্য্যন্ত তিনি স্থির হইয়া বসিয়া রহিলেন ; কিন্তু ইহার চেয়েও একটা বড় কথা এই যে, এইসকল হীন, মৃৰ্থ, মৃতকল্প চাষীয় দল এতবড় সাহস পাইল কি করিয়া যে, গ্রামের মধ্যে বাস করিয়াও এই দুৰ্দ্ধান্ত জীবাননা চৌধুরী ও জনাৰ্দ্দন রায়ের নামে নালিশ করিয়া বসিল ! জীবনের অধিকাংশ কাল যাহারা পেট ভরিয়া খাইতে পায় না, শীতের রাত্রে যাহারা বসিয়া কাটায়, মারীর দিনে যাহার কুকুর-বেড়ালের মত মরে, আবাদের দিনে এক-মুষ্টি বীজের জন্য যাহার ওই দরজার বাহিরে পড়িয়া হত্যা দেয়, তাহারা আদালতে দাড়াইবার টাকা পাইল কাহার কাছে ? এ দুৰ্ম্মতি তাহদের কে দিল ? সে কি এই সোজা কথাটা ইহাঙ্গেয় বলিয়া দিতে পারিল না যে, কেবল জেলা-আদালতেই নয়, হাইকোর্ট বলিয়াও একটা ব্যাপার আছে, সেখানে জীবানন্দ-জনাৰ্দ্দনকে ডিঙাইয়া সাগর সর্দার কখনও জয়ী হষ্টতে পারে না । ইংরেজের বিচারালয় ধনীর জন্তু তৈরি, দরিদ্রের জন্য নয়—তাহার অর্থ আছে, সামর্থ্য আছে, ব্যারিস্টার জামাই আছে, বিশ্বস্ত উকিল মোক্তার আছে, এবং আরও কত কি সুবিধা-স্নযোগ আছে- এইসকল আপনাকে আপনি বলিয়া জনাৰ্দ্দন শক্তি ও সাহস সঞ্চয় করিবার চেষ্টা করিতে লাগিলেন, কিন্তু স্ববিধ বিশেষ হইল না। কারণ, এ ত শুধু টাকা-কড়ি, জমি-জম, কেনা-বেচাই নয়, এতদুপলক্ষে যে-সকল অসামান্য কাৰ্য্যগুলা সম্পন্ন করাইয়াছেন, তাহার ফলস্বরূপ ফৌজদারী দণ্ডবিধির কেতাবের পাতায় পাতায় যে-সকল কঠিন বাক্য লিপিবদ্ধ করা আছে, তাহাদের নিষ্ঠুর চেহার আড়ালে দাড়াইয় তাহাকে অত্যন্ত ভয় দেখাইতে লাগিল । এ-কথা রাষ্ট্র হইতে যে অবশিষ্ট নাই, সুদীর্ঘ অভিজ্ঞতায় রায়মহাশয় তাহা জানিতেন, তাই দিনের বেলাটা কোনমতে কাটাইয়া রাত্রের অন্ধকারে এককড়িকে ডাকিয়া পাঠাইলেন, এবং জমিদার-সরকার হইতে ইহার কিরূপ বিহিত হইতেছে জিজ্ঞাসা করিলেন । এককড়ি কহিল, হুজুরের কাছে ত এখনও পেশ করা হয়নি। জনাৰ্দ্দন স্বাগ করিয়া কহিলেন, করনি ত কর গে। বুড়ে বয়সে কি শেষে ফাটক খাটবো নাকি ? র্তাহার শঙ্কা ও ব্যাকুলতায় এককড়ি হাসিয়া বলিল, ভয় কি বারমশাই, ফাটক খাটতে হয় ত আমিই খাটবো, আপনাদের যেতে দেব না। কিন্তু গরীবের প্রতি দৃষ্টি রাখবেন, ভুলবেন না । জনাৰ্দ্দন খুশী হইয়া কহিলেন, সে ত জানি এককড়ি, তুমি থাকতে ভয় নেই, তুমি যা বোৰো উকিলের বাবাও তা বোঝে না, কিন্তু জানো ত সব কে সাহেব নাকি নিজে তারকে আসচে-ব্যাট মহা বদমাইস। কিন্তু ভেতরের খবর কিছু