পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (পঞ্চম সম্ভার).djvu/১৯২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ চুটিয়া বাহির হইয়া গেলেন। জীবানন্দ তখন মন্দিরের একটা ভাঙ খিলান পরীক্ষা করিতেছিলেন, এবং তারাদাস অদূরে দাড়াইয় তাহার প্রশ্নের জবাব দিতেছিল, জনাৰ্দ্দন একেবারে সম্মুখে উপস্থিত হইয়া বলিলেন, হুজুর ! সমস্ত ব্যাপার একবার মনে করে দেখুন। জীবানন্দ প্রথমে বুঝিতে পারিলেন না কিসের ব্যাপার, কিন্তু তাহার অস্বাভাবিক ব্যাকুলতা এবং প্রাঙ্গণের একধারে এককড়ি নদীকে দেখিতে পাইয়া কাল রাত্রের কথা স্মরণ হইল। বলিলেন, কিন্তু উপায় কি রায়মশাই | ' সাহেব জমি ছাড়তে চায় না, সে সস্তায় কিনেচে—তাছাড়া তার বিস্তর ক্ষতিও হবে । সুতরাং মকদ্দমা জেতা ছাড়া প্রজাদের আর ত পথ দেখিনে । জনাৰ্দ্দন আকুল হইয়া কহিলেন, কিন্তু আমাদের পথ ? জীবানন্দ ক্ষণকাল চিন্তা করিয়া কহিলেন, সে ঠিক ; আমাদের পথও খুব দুর্গম মনে হয় । তাহার শাস্ত কণ্ঠ ও নিৰ্ব্বিকার মুখের ভাব দেখিয়া জনাৰ্দ্দন নিজেকে আর সামলাইতে পারিলেন না। মরিয়া হইয়া বলিয়া উঠিলেন, হুজুর, পথ শুধু দুৰ্গম নয়—জেল খাটতে হবে, এবং আমার এক নয়, আপনিও হয়ত বাদ যাবেন না । জীবানন্দ একটুখানি হাসিলেন, বলিলেন, তাই বা কি করা যাবে রায়মশাই। সখ করে যখন গাছ পোত গেছে, তখন ফল খেতে হবে বই কি ! জনাৰ্দ্দন আর জবাব দিলেন না । ঝড়ের বেগে বাহির হইয়া গেলেন। এককড়ি সব কথা বোধ হয় শুনিতে পায় নাই; সে দ্রুতপদে কাছে আসিতেই তাহাকে চীৎকার করিয়া বলিলেন, এ আমাদের সৰ্ব্বনাশ করবে এককড়ি, আমার নিৰ্ম্মলকে একটা টেলিগ্রাম ক’রে দাও—সে একবার এসে পড়ুক । o २१ চণ্ডীগড় হইতে নিৰ্ম্মল অনেক দুঃখ পাইয়াই গিয়াছিল। ইহার ভালমন্দ এবং সকল সংস্রব হইতে নিজেকে সে চিরকালের মত বিমুক্ত করিয়া যাইতেছে, যাইবার সময়ে ইহাই ছিল তাহার একান্ত অভিলাষ । ভগবানের কাছে কায়মনে প্রার্থনা করিয়াছিল, যাহা গত হইয়াছে তাহা আর যেন না ফিরিয়া আসে, ইহার কোন সংযোগ-সুত্রই আর যেন না জীবনে তাহার কোথাও অবশিষ্ট রহিয়া যায়। সে সোজা মাতুৰ। বিলাস ও সাহেবিয়ানার মধ্যে দিয়াও সে সংসারের সোজা পথটি ধরিয়াই চলিতে চাহিত হৈযই ছিল তাহার একমাত্র—তাহার গৃহিণী, তাহার প্রিয়তমা, Avis