শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ
শেখর বলিল, চেয়ে রইলে, বুঝতে পারলে না ?
ললিতা মাথা নাড়িয়া বলিল, না ।
আরও একটু বড় হও, তখন বুঝতে পারবে, বলিয়া শেখর জুতা পায়ে দিয়া বাহির হইয়া গেল ।
রাত্রে শেখর একটা কোচের উপর চুপ করিয়া শুইয়াছিল, মা আসিয়া ঘরে ঢুকিলেন। সে তাড়াতাড়ি উঠিয়া বসিল । মা একটা চৌকির উপর বসিয়া পড়িয়া বলিলেন, মেয়ে কি রকম দেখে এলি রে ?
শেখর মায়ের মুখের দিকে চাহিয়া বলিল, বেশ ।
শেখরের মায়ের নাম ভুবনেশ্বরী। বয়স প্রায় পঞ্চাশের কাছে আসিয়াছিল, কিন্তু এমনি মুন্দর র্তাহার দেহের বাধন যে, দেখিলে পয়ত্রিশ-ছত্রিশের অধিক মনে হইত ন! ! আবার এই সুন্দর আবরণের মধ্যে যে মাতৃদেহটি ছিল, তাহ আরও নবীন আরও কোমল । তিনি পাড়াগায়ের মেয়ে, পাড়াগায়ে জন্মিয় সেইখানেই বড় হইয়াছিলেন বটে, কিন্তু সহরের মধ্যে র্তাহাকে একদিনের জন্য বে-মানান দেখায় নাই। সহরের চাঞ্চল্যসজীবতা এবং আচার-ব্যবহারও যেমন তিনি স্বচ্ছন্দে গ্রহণ করিতে পারিয়াছিলেন, জন্মভূমির নিবিড় নিস্তব্ধতা ও মাধুর্ঘ্যও তেমনি হারাইয়। ফেলেন নাই। এমন মাটি যে শেখরের কত বড় গৰ্ব্বের বস্তু ছিল, সে-কথা তাহার মাও জানিতেন না । জগদীশ্বর শেখরকে অনেক বস্তু দিয়াছিলেন । অনন্তসাধারণ স্বাস্থ্য, রূপ, ঐশ্বৰ্য্য, বুদ্ধি—কিন্তু এই জননীর সন্তান হইতে পারার ভাগ্যটাকেই সে কায়মনে ভগবানের সবচেয়ে বড় দান বলিয়া মনে করিত ।
মা বলিলেন, 'বেশ বলে চুপ করে বইলি যে রে!
শেখর আবার হাসিয়া মুখ নীচু করিয়া বলিল, যা জিজ্ঞেস করলে তাই ত বললুম।
মাও হাসিলেন । বলিলেন, কই বললি ? রঙ কেমন, ফসর্ণ ? কার মত হবে ? আমাদের ললিতার মত ?
শেখর মুখ তুলিয়া বলিল, ললিতা ত কালে মা, ওর চেয়ে ফস1।
মুখ-চোখ কেমন?
তাও মন্দ নয় ।
তবে কর্তাকে বলি ?
এবার শেখর চুপ করিয়া রহিল।
ጙ•No
পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (পঞ্চম সম্ভার).djvu/২১২
পরিভ্রমণে ঝাঁপ দিন
অনুসন্ধানে ঝাঁপ দিন
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
