পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (পঞ্চম সম্ভার).djvu/২৩৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

जखुम अंब्रिट्ध्कृल চায়ের মজলিস হইতে নি:শঙ্গে পলাইয়া আসিয়া ললিতা শেখরের ঘরে চুকিয়া উজ্জ্বল গ্যাসের নীচে একটা তোরঙ্গ টানিয়া আনিয়া শেখরের গরম বস্ত্রগুলি পাট করিয়া গুছাইয়া রাখিতেছিল, শেখরকে প্রবেশ করিতে দেখিয়া মুখ তুলিয়া তাহার মুখের পানে চাহিয়া সে ভয়ে বিস্ময়ে নির্বাক্ হইয়া রহিল। মোকদ্দমায় সৰ্ব্বস্ব হারিয়া মানুষ যে রকম মুখ করিয়া আদালত হইতে বাহির হইয়া আসে, এ-বেলার মানুষকে যেন ও-বেলায় সহসা আর চিনিতে পারা যায় না, এই এক ঘণ্টার মধ্যে তেমনি শেখরকে ললিতা যেন ঠিক চিনিতে পারিল না। তাহার মুখের উপর সর্বস্ব হারানোর চিহ্ন যেন কে চিহ্নিত করিয়া দিয়াছে। শেখর শুষ্ককণ্ঠে জিজ্ঞসা করিল, কি হচ্চে ললিতা ? ললিতা সে-প্রশ্নের জবাব না দিয়া কাছে সরিয়া আসিয়া দুই হাতে তাহার একটা হাত লইয়া কঁাদ কঁাদ হইয়া বলিল, কি হয়েচে শেখরদা ? কৈ, কিছুই হয়নি ত, বলিয়া শেখর জোর করিয়া একটু হাসিল। ললিতার করম্পর্শে তাহার মুখে কতকটা সজীবতা ফিরিয়া আসিল । সে নিকটস্থ একটা চৌকির উপরে বসিয়া পড়িয়া সেই প্রশ্নই করিল, তোমার হচ্চে কি ? ললিত কহিল, মোটা ওভারকোটটা সঙ্গে দিতে ভুলেছিলুম, সেইটাই দিতে এসেচি । শেখর শুনিতে লাগিল । ললিতা এতক্ষণে অপেক্ষাকৃত স্বস্থ হইয়া বলিতে লাগিল, গতবারে গাড়িতে তোমার বড় কষ্ট হয়েছিল, বড় কোট ত অনেকগুলোই ছিল, কিন্তু খুব মোটা-সোট একটাও ছিল না। তাই আমি ফিরে এসেই দোকানে মাপ দিয়ে এইটে তৈরি করিয়েছিলুম, বলিয়া সে খুব ভারি একটা ওভারকোট তুলিয়া আনিয়া শেখরের কাছে রাখিল । শেখর হাত দিয়া পরীক্ষা করিয়া বলিল, কই, আমাকে বলনি ত ? ললিত হাসিয়া বলিল, তুমি বাবুমাস্থ্য, তোমাকে বললে কি এত মোটা কোট তৈরি করতে দিতে ? তাই বলিনি, তৈরি করিয়ে তুলে রেখেছিলুম।—বলিয়া সেটা যথাস্থানে রাখিয়া দিয়া বলিল, ঠিক উপরেই রইল, তোরঙ্গ খুললেই পাবে—শীত করলে গায়ে দিতে ভুলো না যেন! আচ্ছা, বলিয়া শেখর নির্নিমেষ-চোখে কিছুক্ষণ চাহিয়া থাকিয়া হঠাৎ বলিয়া উঠিল, ন, এমন হতেই পারে না । ३२*