পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (পঞ্চম সম্ভার).djvu/২৪০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ দিন-চারেক পূৰ্ব্বে সে যথারীতি দীক্ষা গ্রহণ করিয়া ব্রাহ্ম হইয়াছিল, আজ সেই সংবাদটা নানা বর্ণে বিচিত্র হইয়া গোড় হিন্দু নবীনের শ্রুতিগোচর হইয়াছে। নৰীনের চোখ দিয়া অগ্নিস্ফুলিঙ্গ বাহির হইতে লাগিল, কিন্তু গুরুচরণ তেমনি মৌন নতমুখে বসিয়া রহিল। সে কাহাকেও কোন কথা জিজ্ঞাসা না করিয়া কাজটা করিয়া অবধি বাড়িতে কান্নাকাটি এবং অশান্তির পরিসীমা ছিল না। নবীন পুনরায় তর্জন করিয়া উঠিলেন, বল না হে, সত্যি কি না ? গুরুচরণ জলভারাক্রান্ত দুই চক্ষু তুলিয়া বলিল, আজ্ঞে সত্যি । কেন এমন কাজ করলে ? তোমার মাইনে ত মোটে ষাটটি টাকা, তুমি—ক্রোধে নবীন রায়ের মুখ দিয়া কথা বাহির হইল না। গুরুচরণ চোখ মুছিয়া, রুদ্ধকণ্ঠ পরিষ্কার করিয়া লইয়া বলিল, জ্ঞান ছিল না দাদা, দুঃখের জালায় গলাতেই দড়ি দেবে, কি ব্ৰহ্মজ্ঞানী হবে, কিছুই ঠাওরাতে পাচ্ছিলুম না। শেষে ভাবলুম, আত্মঘাতি না হয়ে ব্ৰহ্মজ্ঞানী হই, তাই ব্ৰহ্মজ্ঞানীই হয়ে গেলুম। গুরুচরণ চোখ মুছিতে মুছিতে বাহির হইয়া গেল। নবীন চীৎকার করিয়া বলিলেন, বেশ করেচ, নিজের গলায় দড়ি দিতে না পেরে জাতের গলায় দড়ি টাঙিয়ে দিয়েচ–আচ্চ যাও, আর আমাদের সামনে কালামুখ বা'র করে না, এখন ধারা-সব মন্ত্রী হয়েচেন, তাদের সঙ্গেই থাক গে—মেয়েদের হাড়ি মুচির ঘরে দাও গে যাও, বলিয়া বিদায় করিয়া দিয়া তিনি মুখ ফিরাইয়া বসিলেন । নবীন রাগে অভিমানে কি যে করিবেন প্রথমটা কিছুই ভাবিয়া পাইলেন না। গুরুচরণ হাতের ভিতর হইতে সম্পূর্ণ বাহির হইয়া গিয়াছে, আর শীঘ্ৰ মুঠার মধ্যে আসিবে, এ সম্ভাবনাও নাই—তাই নিফল আক্রোশে ছটফট করিয়া, আপাতত জবা করিবার আর কোন ফন্দি খুজিয়া না পাইয়া, সেইদিনই মিস্ত্রী ডাকিয়া ছাদের বাতায়াতের পথটা বন্ধ করিয়া একটা মস্ত প্রাচীর তুলিয়া দিলেন। এই সংবাদ বহুদূর-প্রবাসে বসিয়া ভুবনেশ্বরী শেখরের মুখে শুনিয়া কাদিয়া ফেলিলেন,-শেখর এ মতি-বুদ্ধি কে দিলে তাকে ? মতি-বুদ্ধি কে দিয়েছিল শেখর তাহ নিশ্চয় অনুমান করিয়াছিল। সে উল্লেখ না করিয়া বলিল, কিন্তু মা, দু’দিন পরে তোমরাই ত তাকে এক-ঘরে করে রাখতে । এতগুলি মেয়ের বিয়ে তিনি কি করে দিতেন, আমি ত ভেবে পাইনে। ভূবনেশ্বরী ঘাড় নাড়িয়া বলিলেন, কিছুই আটকে থাকে না শেখর। আর সেজন্য জাগে থেকে জাত দিতে হলে অনেককেই দিতে হয়। ভগবান ধাদের সংসারে পাঠিয়েচেন, তিনিই ভাঙ্কের ভার নিতেন। ९७१