পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (পঞ্চম সম্ভার).djvu/২৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দেনা-পাওনা জীবানন্দ কহিল, দু-একদিন । তারপর পারবে । সেই লিভারের ব্যথাটা আজ ভারি বেড়েচে—আর বেশি বিরক্ত ক’রে না—যাও । মহাবীর তাড়া দিয়া বলিল, আরে উঠ না মাগী –চোল । কিন্তু তাহার কথা শেষ না হইতে অকস্মাৎ উভয়েই চমকিয়া উঠিল । জীবানন্দ ভয়ানক ধমক দিয়া কহিল, খবরদার, শুয়োরের বাচ্চা, ভাল করে কথা বল। ফের যদি কখনো আমার হুকুম ছাড়া কোনো মেয়েমানুষকে ধরে আনিস্ ত গুলি করে মেরে ফেলব । বলিতে বলিতেই মাথার বালিশট তাড়াতাড়ি পেটের নীচে টানিয়া লইয়া উপুড় হইয়া শুইয়া পড়িল এবং যাতনায় একটা অফুট আৰ্ত্তনাদ করিয়া কহিল, আজকের মত ও ঘরে বন্ধ থাকে, কাল তোমার সতীপনার বোঝা-পড়া হবে । এই—যা না আমার মুমুখ থেকে সরিয়ে নিয়ে । মহাবীর আস্তে আস্তে বলিল, চলিয়ে— - ষোড়শী নিরুত্তরে উঠিয়া দাড়াইয়া নির্দেশমত পাশের অন্ধকার ঘরে প্রবেশ করিতে যাইতেছিল, হঠাৎ তাহার নাম ধরিয়া ডাকিয়া জীবানন্দ কহিল, একটু দাড়াও—তুমি পড়তে জানো, না ? ষোড়শী মৃদুকণ্ঠে বলিল, জানি । জীবানন কহিল, তা হলে একটু কাজ করে যাও। ওই যে বাক্সটা-ওর মধ্যে আর একটা ছোট কাগজের বাক্স পাবে । কয়েকটা ছোট-বড় শিশি আছে যার গায়ে বাঙলায় ‘মরফিয়া’ লেখা, তার থেকে একটুখানি ঘুমের ওষুধ দিয়ে যাও । কিন্তু খুব সাবধান, এ ভয়ানক বিষ । মহাবীর আলোটা ধর । বাতির আলোকে ষোড়শী কম্পিত-হস্তে বাক্স খুলিয়া শিশি বাহির করিল এবং সভয়ে জিজ্ঞাসা করিল, কতটুকু দিতে হবে ? জীবানন্দ তীব্র বেদনায় আবার একটা অব্যক্ত ধ্বনি করিয়া কহিল, ঐ ত বললুম খুব একটুখানি। আমি উঠতেও পারচিনে, আমার হাতের ঠিক নেই, চোখেরও ঠিক নেই। ওতেই একটা কাচের ঝিনুক আছে, তার অৰ্দ্ধেকেরও কম । একটু বেশি হয়ে গেলে এ ঘুম তোমার চওঁীর বাবা এসেও ভাঙাতে পারবে না । ষোড়শী সন্ধান করিয়া ঝিনুক বাহির করিল, কিন্তু পরিমাণ স্থির করিতে তাহার হাত কঁাপিতে লাগিল। তারপরে অনেক যত্নে অনেক সাবধানে যখন সে নিৰ্দ্ধেশমত ঔষধ লইয়া কাছে আসিয়া দাড়াইল, তখন নিৰ্বিচারে সেই বিষ হাত বাড়াইয়া লইয়া জীবানন মুখে ফেলিয়া দিল। প্রশ্ন করিল না, পরীক্ষা করিল না, একবার চোখ মেলিয়া দেখিল না ।

  • *

هابس):