পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (পঞ্চম সম্ভার).djvu/২৫৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পরিণীতা পৰ্য্যস্ত বলিতে সঙ্কোচ করিল না । তখন কথায় কথায় গুরুচরণের স্ত্রী বলিয়াছিলেন, এ সুখের বিয়ে নয়, তাই শেষ পর্য্যস্ত কারো মনে ছিল না, নইলে ললিতা তখন তোমাদের সকলকেই সংবাদ দিতে বলেছিল। ললিতার এই স্পৰ্দ্ধাটা যেন সমস্ত আগুনের উপরেও শিখা বিস্তার করিয়া প্রজ্জলিত হইতে লাগিল । দ্বাদশ পরিচ্ছেদ শেখর মাকে লইয়। যখন ফিরিয়া আসিল, তখনও তাহার বিবাহের দশ-বারো দিন বিলম্ব ছিল । দিন-তিনেক পরে, একদিন সকালে ললিতা শেখরের মায়ের কাছে বসিয়া একটা ডালায় কি কতকগুলা তুলিতেছিল। শেখর জানিত না, তাই কি একটা কাজে ’মা’ বলিয়। ঘরে ঢুকিয়াই হঠাৎ থতমত খাইয়া দাড়াইল । ললিতা মুখ নীচু করিয়া কাজ করিতে লাগিল । মা জিজ্ঞাসা করিলেন, কি রে ? সে যেমন আসিয়াছিল, তাহা ভুলিয়া গিয়া, না এখন থাকৃ, বলিয়া তাড়াতাড়ি বাহির হইয় গেল। ললিতার মুখ দেখিতে পায় নাই কিন্তু তাহার হাত দুইটির উপর তাহার দৃষ্টি পড়িয়াছিল। তাহ সম্পূর্ণ নিরাভরণ না হইলেও দু'গাছি করিয়া কাচের চুড়ি ছাড়া আর কিছু ছিল না। শেখর মনে মনে ক্রর হাসি হাসিয়া বলিল, এ আর এক রকমের ভড়ং। গিরীন সঙ্গতিপন্ন তাহ সে জানিত, র্তাহার পত্নীর হাত এরূপ অলঙ্কারশূন্ত হইবার কোন সঙ্গত হেতু সে খুজিয়া পাইল না । সেইদিনই সন্ধ্যার সময় সে দ্রুতপদে নীচে নামিয়া আসিতেছিল, ললিতাও সেই সিড়িতে উপরে উঠতেছিল, অত্যন্ত সঙ্কোচের সহিত মৃদুকণ্ঠে বলিল, তোমাকে একটা কথা বলবার আছে । শেখর একমুহূৰ্ত্ত স্থির হইয়া বিস্ময়ের স্বরে বলিল, কাকে ? আমাকে ? ললিতা তেমনি মৃদুস্বরে বলিল, ই তোমাকে । আমার সঙ্গে আবার কি কথা ! বলিয়া শেখর পূর্বাপেক্ষ দ্রুতপদে নামিয়া গেল ।