দেনা-পাওনী অবহেলা ! নারীর চোখের জলে উহার করুণা নাই ; রমণীর রূপ ও যৌবনে উহার মমতা নাই, আকর্ষণ নাই, স্বামী-পুত্রবতীর সতীধৰ্ম্ম নিতান্ত নিরর্থক ; হত্যা করিত্তে উহার বাধে না ; তাহাদের হৃদয়ের রক্তে দুই পা ভরিয়া গেলেও ভ্রক্ষেপ করে না ; যে নিজের প্রাণটাকে পর্য্যস্ত এইমাত্র তাহার হাতে তুলিয়া তাহারি প্রদত্ত বিষ অসঙ্কোচে চোথ মুদিয়া ভক্ষণ করিল, এতটুকু দ্বিধা করিল না। অশ্রদ্ধা ও অনা সক্তির এই অপরিমেয় পাষাণ-ভার ঠেলিয়া কি মা-চণ্ডীই তাহার পরিভ্রাণের পথ করিতে পারিবেন । এমনি করিয়া সে যেদিকে দৃষ্টিপাত করিল নিদারুণ আঁধার ব্যতীত এতটুকু আলোক-রশ্মিও চোখে পড়িল না। তখন পরিপূর্ণ নিরাশ্বাস তাহার ওই একমাত্র দেবতার মন্দির ঘুরিয়াই কেবল কল্পনার জাল বুনিতে লাগিল । ভোরের দিকে বোধ করি সে একটুখানি তন্দ্রাভিভূত হইয়া পড়িয়াছিল, হঠাৎ পিঠের উপর একট চাপ অনুভব করিয়া ধড়মড় করিয়া সোজা উঠিয়া বসিয়া দেখিল জানালা দিয়া স্বর্ষ্যের আলোক ঘরে প্রবেশ করিয়াছে । বাহির হইতে যে দ্বার ঠেলিতেছিল, সে কহিল, আপনি বেরিয়ে আসুন, আমি এককড়ি । ষোড়শী গায়ের বস্ত্র সংযত করিয়া লইয়া উঠিয়া দাড়াইল, এবং দ্বার খুলিয়া সম্মুখেই দেখিতে পাইল গত রাত্রির সেই শয্যার উপর জীবানন্দ প্রায় তেমনিভাবেই বালিশে ঠেস্ দিয়া বসিয়া আছে। কাল দ্বীপের স্বল্প আলোকে তাহার মুখখানা ষোড়শী ভাল দেখিতে পায় নাই, কিন্তু আজ এক মুহূৰ্ত্তের দৃষ্টিপাতেই দেখিতে পাইল সুদীর্ঘ অত্যাচার তাহার দেহের প্রতি অঙ্গে কত বড় গভীর আঘাত করিয়াছে। বয়স ঠিক অনুমান হয় না—হয়ত চল্লিশ, হয়ত আরও বেশি–রগের দুইধারে কিছু কিছু চুল পাকিয়াছে, প্রশস্ত ললাট রেখায় ভরা, তাহার উপরে কালো কালো ছাপ পড়িয়াছে। যক্ষ্মা রোগীর চোখের মত দৃষ্টি অস্বাভাবিক তীক্ষ এবং তাহারই নীচে শীর্ণ নাকট যেন খাড়ার মত ঝুলিয়া পড়িয়াছে। সমস্ত মুখখানা অত্যন্ত মান, তাহারই সঙ্গে মিশিয়া ভিতরের কি একটা অব্যক্ত বদনা যেন কালিম ব্যাপ্ত করিয়া দিয়াছে। জীবানন্দ হাত নাড়িয়া অফুট-কণ্ঠে কহিল, তোমার ভয় নেই, কাছে এসে ! ষোড়শী ধীরে ধীরে কয়েক পদ অগ্রসর হইয়া নতনেত্রে নীরবে দাড়াইল । জীবানন কহিল, পুলিশের লোক বাড়ি ঘিরে ফেলেছে—ম্যাজিস্ট্রেট সাহেব গেটের মধ্যে ঢুকেছেন—এলেন বলে। ষোড়শী মনে মনে চমকিয়া উঠিল, কিন্তু কথা কহিল না। জীবানঙ্গ বলিতে লাগিল, জেলার ম্যাজিস্ট্রেট টুরে বেরিয়ে ক্রোশখানেক দূরে র্তাবু ফেলেছিলেন, তোমার >够
