পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (পঞ্চম সম্ভার).djvu/৩০৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ নলিনী কখনো অভিমান করে নাই, স্বামীর কষ্টের কথা মনে করিয়া সে নীরবে সমস্ত সহ্ করিত—আর পারিল না। সে ভাবিল, এই ক্ষুদ্র কারণে যে স্বামী-কর্তৃক পরিত্যক্ত হয়, সে মরে না কেন ? দারুণ অভিমানে নলিনী শুকাইতে লাগিল ; ওদিকে সত্যেন্দ্রর অভিমান ফুরাইয়া গিয়াছে ; একদও না থাকিলে যাহার চলে না, তাহার এই মিছা অভিমান কতদিন থাকে ? অভিমান দারুণ কষ্টের কারণ হইয়া দাড়াইয়াছে। সত্যেন্দ্র প্রত্যহ চাহিয়া থাকে-আজ হয়ত নলিনীর পত্র আসিবে, হয়ত সে লিখিবে, আমায় লইয়! যাও ; সত্যেন্দ্র ভাবে, তাহা হইলে মাথায় করিয়া লইয়া আসিব, আর কখনও এরূপ অন্যায় ব্যবহার করিব না। কিন্তু ভবিতব্য কে অতিক্রম করিবে ? যাহা হইবার তাহা হইবেই। তুমি আমি ক্ষুদ্র প্রাণী মাত্র, আজ কাল করিয়া ছয় মাস কাটিয়া গেল, হতভাগিনী কোন কথা লিখিল না। পাপিষ্ট সত্যেন্দ্রনাথ ভাঙ্গিল, কিন্তু মচকাইল না। ছয় মাস কাটিয়া গেল। ক্রমশ: সত্যেন্দ্রনাথের অসহ্য হইল। লুপ্ত অভিমান আবার দৃপ্ত হইয়া উঠিল, ক্ৰোধ আসিয়া তাহাতে যোগ দিল। হিতাহিত রহিত সত্যেন্দ্রনাথ নিজের দোষ দেখিল না, ভাবিল, যাহার অহঙ্কার এত তাঁহার প্রতিশোধও তদ্রুপ প্রয়োজন । কেহই নিজের দোষ দেখিল না । সেই অৰ্দ্ধমিলিত হৃদয় দুইটি আবার চিরকালের জন্য বিভিন্ন হইয়া চলিল। যৌবনের প্রারস্তে সঙ্কুচিত লতাকে টানিয়া বাড়াইয়াছিল কিন্তু আর সহে না, এবার ছিড়িবার উপক্রম হইল। সত্যেন্দ্রনাথ ! তোমার দোষ দিই না, তাহারও দিই না । দুইজনেই ভুল করিয়াছ, দোষ কর নাই। ভূল দেখাইতে পারিলে আত্মপ্পানি কাহার যে অধিক হইত, তাহা ভগবানেই জানেন । আমরাও বুঝিতে পারিতাম না, তোমরাও পারিতে না। বুঝিতে পারি না-কি আকাথায়, কি সাধ পূর্ণ করিতে তোমরা এতটা করিলে ! সাধু মিটে না ; মিটাইবার ইচ্ছাও নাই। কি সাধ তাহাও হয়ত ভাল বুঝিতে পারি না। তথাপি কাতর হৃদয় কি একটা অতৃপ্ত আকাঙ্ক্ষায় সকল সময়ই হা হা করিয়া উঠে। কি যে হয়, কেন যে অদৃগু গতি ঐ লক্ষ্যহীন প্রাস্তে পরিচালিত হয়, কিছুতেই তাহা নির্ণয় করা যায় না। যাহা ঘটিবার, তাহা ঘটিবে। ইচ্ছা হইলেও মনের সহিত দ্বন্দ্বযুদ্ধ করিয়াও তোমাকে অপরাধ হইতে অধ্যাহতি দিব। দিব কি ? 993