পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (পঞ্চম সম্ভার).djvu/৩৩২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ বা ছোটবাবু, আর কোথায় বা তার সংমা । ভয়ে একবার দেখতে পর্যন্ত এলো না। তখন একলা জ্যাঠামশাই, কিবা দিন কিবা রাত্রি। মেজবৌমা বলিলেন, পরেশের নিজের মা বেঁচে থাকলেও হয়ত এতখানি করতে পারতেন না । গুরুচরণ কুষ্ঠিত হইয়া উঠিলেন, কহিলেন, থাকু মা ও-সকল আলোচনা । তাহারা প্রস্থান করিলে বুদ্ধের চোখের সম্মুখে যেন বিমল এবং পরেশ আসিয়া পাশাপাশি দাড়াইল । জানালার বাহিরে অন্ধকার আকাশের প্রতি চাহিয়া অকস্মাং মুখ দিয়া দীর্ঘশ্বাস পড়িল । তাহার পরে মোট বাশের লাঠিটা হাতে তুলিয়া লইয়া সরকারদের বৈঠকখানায় পাশা খেলিতে চলিয়া গেলেন । পরদিন দুপুরবেলায় গুরুচরণ তাত খাইতে বসিয়াছিলেন, বাটীর উত্তরদিকের বারান্দায় কতকটা অংশ ঘিরিয়া লইয়া হরিচরণের য়ান্নার কাজ চলিতেছিল, তথা হইতে তীক্ষ নারী-কণ্ঠে কি কটু কথাই যে বাহির হইয়া আসিতেছিল তাহার সীমা নাই। তাহার আহারের যথেষ্ট বিঘ্ন ঘটিতেছিল, কিন্তু সহসা পুরুষের মোট গল আসিয়া যখন তাহাতে মিশিল, তখন তিনি ক্ষণকালের জন্য কান খাড়া করিয়া শুনিয়া হঠাৎ উঠিয়া দাড়াইলেন। মেজঠাকুরাণী অন্তরাল হইতে হায় হায় করিয়া উঠিলেন একং পঞ্চুর মা ক্ৰোধে ক্ষোভে চীৎকার করিয়া এই দুর্ঘটনা প্রকাশ করিয়া দিল । প্রাঙ্গণে দাড়াইয়া গুরুচরণ ডাকিয়া কহিলেন, হরিচরণ, মেয়েদের কথায় আমি কান দিতে চাইনে, কিন্তু তুমি পুরুষমানুষ হয়ে যদি বিধবা বড়ভাজকে এমনি করে অপমান কর, তার ত তা হলে বাড়িতে থাকা চলে না । এ-কথার কেহ জবাব দিল না, কিন্তু বাহিরে যাইবার পথে ছোটবধুমাতার পরিচিত তীক্ষু-কণ্ঠ তাহার কানে গেল, সে তামাসা করিয়া কহিতেছে, অমন করে অপমান করে না বলচি, মেজবৌঠাকরুণ তা হলে বাড়িতেই থাকবে না। কি হবে তখন ? হরিচয়ণ প্রত্যুত্তরে কহিতেছে, পৃথিবী রসাতলে যাবে আর কি। কেবা থাকবার জন্তে মাথার দিবি দিচ্ছে—গেলেই ত বঁাচ যায়। গুরুচরণ থমকিয়া দাড়াইয়া পড়িয়াছিলেন, বক্তব্য শেষ হইলে নীরবে নিষ্ক্রাস্ত হইয়া গেলেন।