পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (পঞ্চম সম্ভার).djvu/৩৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দেনা-পাওনা জীবানন্দ কহিল, নাই থাক, কিন্তু তোমার মা জানতেন শুধু কেবল তোমাকে তোমার বাবার হাত থেকে আলাদা রাখবার জন্যেই তিনি যা হোক একটা— বিবাহের গওঁী টেনে রেখেছিলেন ? তা হবেও বা । অলকার মাও বেঁচে নেই, অলকাই আমি কি না তা নিয়েও আপনার দুশ্চিস্তা করার আবখ্যক নেই। কিন্তু কেন যে ওঁদের সঙ্গে গেলুম না, কেন যে নিজের সৰ্ব্বনাশের কোথাও কিছু বাকি রাখলুম না, সেই কথাটাই আজ আপনাকে বলে যাব । কাল আপনার সন্দেহ হয়েছিল হয়ত বা আমি লেখা-পড়া জানি ; লিখতে পড়তে ত ওই এককড়িও জানে, সে নয়, কিন্তু আমার যিনি গুরু তিনি হাতে রেখে কিছু দান করেন না, তাই আজ র্তারই পায়ে নিজেকে এমন করে বলি দিতেও আমার বাধল না। জীবানন্দ কিছুক্ষণ নীববে নতমুখে থাকিয়া ধীরে ধীরে মুখ তুলিয়া বলিল, কিন্তু ধর, আসল কথা যদি তুমি প্রকাশ করে বল, তা হলে— ষোড়শী তৎক্ষণাৎ কহিল, আসল কথাটা কি ? বিবাহের কথা ? কিন্তু সেই স্ত মিথ্যে ! বিয়ে ত হয়নি। তা ছাড়া, সমস্ত অলকার, আমার নয়। আমি সরিারাত এখানে কাটিয়ে গিয়ে ও গল্প করলে সৰ্ব্বনাশের পরিমাণ তাতে এতটুকু কমবে না। কিন্তু ও-কথা ত আর আমি ভাবচিনে । আমার বড় দুঃখ এখন আর আমি নিজে নয়—সে আপনি । কাল ভেবেছিলুম আপনার বুঝি সাহসের আর অন্ত নেই—নিজের প্রাণটাও বুঝি তার কাছে ছোট, কিন্তু আজ দেখতে পেলাম সে ভুল। শুধু যে এক নিরপরাধ নারীর কলঙ্কের মূল্যেই আজ নিজেকে বাচাতে চেয়েছিলেন তাই নয়, একদিন যে অনাথ মেয়েটিকে অকুলে ভাসিয়ে দিয়েই কেবল আত্মরক্ষা করেছিলে, আজ তাকে চেনবার সাহস পৰ্য্যস্ত আপনার হয় নি। জীবানন্দ কয়েক মুহূৰ্ত্ত চুপ করিয়া থাকিয়া অকস্মাৎ বলিয়া উঠিল, ষোড়শী, আজ আমি এত নীচে নেমে গেছি যে, গৃহস্থের কুল-বধূর দোহাই দিলেও তুমি মনে মনে হাসবে, কিন্তু সেদিন অলকাকে বিবাহ করে বীজগার জমিদার বংশের বধু বলে সমাজের ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়াটাই কি ভালো কাজ হতো ? ষোড়শী অসঙ্কোচে উত্তর দিল, সে ঠিক জানিনে, কিন্তু সত্য কাজ হ’তো এ জানি । স্বার সমস্ত দুর্ভাগ্য জেনেও যাকে হাত পেতে নিতে আপনার বাধেনি, তাকে আমন করে ফেলে না পালালে এতবড় লাঞ্ছনা আজ আপনার ভাগ্যে ঘটতো না । সেই সত্যই আজ আপনাকে এ দুর্গতি থেকে বাচাতে পারতো। কিন্তু আমি মিথ্যে বকটি এখন এ সব আর আপনার কাছে বলা নিফল । আমি চললুম-আপনি কোন-কিছু দেবার চেষ্টা ক’রে আমাকে অপমান করবেন না । জীবানন কিছুই কহিল না, কিন্তু এককড়িকে দ্বারপ্রাস্তে দেখিতে পাইয়া সে আঠাৎ যেন কাঙাল হইয়া বলিয়া উঠিল, এককড়ি, তোমাদের এখানে কোন ডাক্তার ቁግ