পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (পঞ্চম সম্ভার).djvu/৪০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ জীবানন্দ বলিল, যা মানুষের হাতের মধ্যে ? তেমন কিছু ? ষোড়শী বলিল, তাও আছে, কিন্তু ভাল হয়ে যদি কখনো জিজ্ঞাসা করেন তখনই জানাবো । তাহার হাতটাকে জীবনন্দ সহসা বুকের কাছে টানিয়া আনিয়া বার বার মাথা নাড়িয়া কহিল, না না, আর ভাল হয়ে নয়—এই কঠিন অসুখের মধ্যে আমাকে বল। মানুষকে অনেক দুঃখ দিয়েচি, আজ নিজের ব্যথার মধ্যে পরের ব্যথা, পরের আশার কথাটা একটু গুনে নিই । নিজের দুঃখটার আজ একটা সদগতি হোক । ষোড়শী আপনার হাতটাকে ধীরে ধীরে মুক্ত করিয়া লইয়া স্থির হইয়া বসিয়া রহিল । জীবানন্দ নিজেও মিনিট-খানেক স্থির ভাবে থাকিয়া কহিল, বেশ তাই হোক, সকলের মত আমিও তোমাকে আজ থেকে যোড়শী বলেই ডাকব । কাল থেকে আজ পর্য্যস্ত আমি এত যন্ত্রণার মধ্যেও মাঝে মাঝে অনেক কথাই ভেবেচি । বোধ হয় তোমার কথাটাই বেশি। আমি বেঁচে গেলুম, কিন্তু তোমার যে এখানে--- ষোড়শী তাড়াতাড়ি বলিয়া উঠিল, কিন্তু আমার কথা থাক । জীবানন্দ বাধা পাইয়া ক্ষণকাল নীরবে থাকিয়া আস্তে আস্তে বলিল, আমি বুঝেচি ষোড়শী ! তোমার জন্যে আমি ভাবি এণ্ড আর তুমি চাও না । এমনি হওয়া উচিত বটে ! বলিয়। সে একটা নিশ্বাস ফেলিয়া চুপ করিয়া রহিল। ষোড়শী বিছানা ছাড়িয়া উঠিয়া দাড়াইল । জীবানন্দ চোখ মেলিয়া কহিল, তুমিও চললে ? - ষোড়শী ঘাড় নাড়িয়া বলিল, না । ঘরটা ভারি নোংরা হয়ে রয়েচে, একটু পরিষ্কার করে ফেলি। বলিয়া সে সম্মতির জন্য অপেক্ষ না করিয়াই গৃহ-কাৰ্য্যে নিযুক্ত হইল। ঘরের অধিকাংশ জানালা দরজাই এ পর্য্যন্ত খোলা হয় নাই, বিস্তর টানাটানি করিয়৷ সেগুলো খুলিয়া ফেলিতেই উন্মুক্ত আকাশ দিয়া একমুহূৰ্ত্তে আলো ও বাতাসে ঘর ভরিয়া গেল ; মেঝের উপর আবর্জনার রাশি নান স্থানে প্রতিদিন স্তুপীকার হইয়া উঠিয়াছিল, একটা বঁটা সন্ধান করিয়া আনিয় ষোড়শী সমুদয় পরিষ্কার করিয়া ফেলিল, এবং অঞ্চল দিয়া বিছানাট ঝাড়িয়া ফেলিয়া বালিশ দু’ট যখন যথাস্থানে গুছাইয়া দিল, তখনও জীবানন্দ একটা কথা কছিল না, কেবল তাহার মলিন মুখের উপর একটা স্নিগ্ধ আলোক যেন কোথা হইতে আসিয়া ধীরে ধীরে স্থিতি লাভ করিতেছিল। ষোড়শী কাজ করিতেছিল, সে শুধু দুই চক্ষু মেলিয়া তাহাকে নীরবে অনুসরণ করিতেছিল, যেন শৃঙ্খলা ও পরিচ্ছন্নত কি, সমস্ত বেদনা ভুলিয়। সে সংসা;ে সৰ্ব্বোত্তম বিস্ময়ের মত জীবনে এই প্রথম দেখিতেছিল । সহসা বাহিরে অনেকগুলো পদশা শুনিয়া ষোড়শী ব্যাটাটা রাখিয়া দিয়া সোজা אפי