পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (পঞ্চম সম্ভার).djvu/৪৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দেনা-পাওনা তখনও মাঠে শেষ হইয়া যায় নাই, উহাদের মাঝখান দিয়া গ্রামের একমাত্র পথ । এই প্রকাশ দিনের বেলায় এই পথের উপর দিয়া মুখ উচু বা নীচু করিয়া কোনভাবেই হাটিয়া যাইতে তাহার পা উঠিল না। আকাশের বিদ্যুৎ একমুহূৰ্ত্তে অন্ধকারের পর্দা তুলিয়া মেঘাচ্ছন্ন পৃথিবীর বক্ষটাকে যেমন মুস্পষ্ট করিয়া দেয়, দূরের ঐ চাষীগুলাও ঠিক তেমনি করিয়া চক্ষের পলকে ষোড়শীর বিগত রাত্রিটাকে তাহার কাছে অত্যন্ত অনাবৃত করিয়া দিল। আবরণের নীচে যে এত জিনিস ঢাকা ছিল, কোন মানুষের জীবনেই যে একটা রীত্রির মধ্যে এত বড় ব্যাপার ঘটিয়া উঠিতে পারে, দেখিতে পাইয়া সে ক্ষণিকের জন্য যেন হতজ্ঞান হইয়া রহিল। সম্পূর্ণ একটা দিনও কাটে নাই, মাত্র কাল সায়াছ বেলায় অপমানের প্রবল তাড়নে দিগ্বিদিক্‌ না ভাবিয়। এই পথ দিয়াই সে স্থাটিয়া গেছে, কিন্তু তাহার পরে ? তাহার পরের ঘটনা ঘটতে মানুষের বহু যুগ লাগিতে পারে, অথচ তাহার লাগে নাই। এ-যেন একটা ভোজ-বাজী হইয়া গেল, তাই আজ পরিচিত পথটারই ও-ধারে তাহার জন্য কি যে অপেক্ষা করিয়া আছে, তাহা কল্পনা করিতেও পারিল না ! ফটকের বাহিরে বাগানের ধার দিয়া একটা পায়ে-হাট পথ নদীর দিকে গিয়াছে, কেবলমাত্র সম্মুখের রাস্তাটা বলিয়াই সে এই পথ দিয়া ধীরে ধীরে নদীর তীরে আসিয়া দাড়াইল। এ দিকে গ্রাম নাই, গরু-ছাগল চরাইতে ক্কচিং কোন রাখাল ভিন্ন এ পথে সচরাচর কেহ চলে না—এই নিরালা স্থানটায় সন্ধ্যার জন্য অপেক্ষা করিয়া সে অন্ধকারে গা ঢাকিয়া ঘরে ফিরিবে মনে করিয়া একটা প্রাচীন তেঁতুলগাছের তলায় বসিয়া পড়িল । - এতক্ষণ পৰ্য্যস্ত সে ঘূর্ণাবৰ্ত্তের মধ্যে পড়িয়াছিল, তাহাতে বৰ্ত্তমানের চিন্তা ছাড়া আর কিছুই তার মনে ছিল না। এইবার যে ভবিষ্যং সাগ্রহে তাহার পথ চাহিয়া আছে, তাহার কথাই একটি একটি করিয়া পুখামুপুস্বরূপে আলোচনা করিতে লাগিল। তাহাদের ছোট গ্রামে এতক্ষণ কোন কথাই কাহারে অবিদিত নাই ; জমিদার তাহাকে ধরিয়া আনিয়াছে, সারারাত্রি আটক রাথিয়াছে—এই কয়দিনের অত্যাচারে গ্রামে ইহা এমনিই একটা সাধারণ ব্যাপার হইয়া উঠিয়াছে যে, এজন্ম বিশেষ কোনরূপ চিন্তিত হইবার আবশ্বক নাই। এমন কি, কেন যে সে মিথ্য করিয়া ম্যাজিস্ট্রেটের কবল হইতে জমিদারকে উদ্ধার করিয়াছে, এ রহস্তোণ্ডেী করিবারও গ্রামে বুদ্ধিমান লোকের অভাব হইবে না। এ যে একটা বড় রকমের মুষের ব্যাপার তাহ৷ সকলেই বুঝিবে । কিন্তু আসল বিপদ হইতেছে তাহার পিতা তারাদাসকে লইয়া। বহুকাল হইতেই উভয়ের সহজ সম্বন্ধটা বাহিরের আগোচরে ভিতরে ভিতরে পচিয়া উঠিতেছিল, এইবার তাহ ঘূণার বাম্পে অনেকখানি স্থান ব্যাপিয়া জলিতে থাকিবে। ইহার শিখা কাহারও দৃষ্ট হইতে আড়াল করা সম্ভব

  • 4