পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (পঞ্চম সম্ভার).djvu/৪৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দেনা-পাওনা ঘরে ঘরে তালা বন্ধ, কেহ কোথাও নাই—সমস্ত বাড়িটা অন্ধকার, শূন্য খাঁ । করিতেছে । সন্ন্যাসিনীকে অনেক উপবাস করিতে হয়, খাওয়ার কথা তাহার মনেও ছিল না ; কোথাও নিরালায় একটু গুইতে পাইলেই সে আপাততঃ বাচিয়া যাইত , কিন্তু ঘরের মধ্যে প্রবেশ করিবার যখন উপায় নাই, তখন বারানার উপরেই একধারে সে নিজের অঞ্চলট পাতিয়া গুইয়া পড়িল । তারাদাস গৃহে নাই, কেন নাই, কি জন্য নাই, কোথায় গিয়াছে, এই সকল কুট প্রশ্নমালা হইতে তাহার নিরতিশয় শ্রাস্ত দেহ-মন অত্যন্ত সহজেই সরিয়া দাড়াইল । এবং রাত্রিটার মত যে সে নিরুপদ্রবে ঘুমাইতে পাইবে, এই তৃপ্তিটুকু লইয়াই সে দেখিতে দেখিতে নিদ্রিত হইয়া পড়িল । ভোরবেলায় ষোড়শীর যখন ঘুম ভাঙিল তাহার অব্যবহিত পরেই সদর দরজায় চাবি থোলার শব্দ হইল, এবং যে বিধবা স্ত্রীলোকটি মন্দিরের ও গৃহের কাজ-কৰ্ম্ম করে সে আসিয়া প্রবেশ করিল। ষোড়শীকে দেখিয়া সে অধিক বিস্মিত হইল না, কহিল, কখন এলে মা, রাত্তিরেই ? খিড়কির দোর খুলে ঢুকেছিলে বুঝি ? যোড়শী ঘাড় নাড়িয়া সায় দিলে সে বলিল, এই কথাই সকলে বলাবলি করছিল মা, রাজাবাবু ত অ-বেলায় চলে গেল, এইবার তোমাকে ছেড়ে দেবে। খাওয়াদাওয়া হয়নি বুঝি ? কি করব মা, ঘরের চাবি বাবাঠাকুর ত রেখে যায়নি, সঙ্গে নে গেছে। তা হোক গে, দোকান থেকে চাল-ডাল এনে দি, কাঠ-কুটো দুটো যোগাড় করে দি চান করে এসে যা হোক দু-মুঠে ফুটিয়ে নিয়ে মুখে দাও। তার পরে যা হবার তা হবে । ষোড়শী জিজ্ঞাসা করিল, বাবা কোথায় গেছে জানিস্ রাণীর মা ? রাণীর মা কহিল, শুনেচি ত মা, কে নাকি তার বোনের মেয়ে আছে, তাকেই আনতে গেছে—এলো বলে। আজ বড়কৰ্ত্তাবাবুর নাতির মানত পূজে, আজ কি আর কোথাও থাকবার জে আছে ? মন্দিরে ত পহুর-রাত থাকতে ধুম লেগে গেছে মা ! যোড়শীর দপ, করিয় মনে পড়িল, আজ মঙ্গলবার, আজ জনাৰ্দ্দন রায়ের দৌহিত্রের মানত পূজা উপলক্ষ্যে জয়চণ্ডীর মন্দিরে তুমুল কাও। আজ কোনমতে কোথাও তাহার লুকাইয়া থাকিবার পথ নাই। সে দেবীর ভৈরবী, এতবড় ব্যাপারে তাহাকে হাজির হইতেই হইবে । এইখানে জনাৰ্দ্দন রায়ের একটা সংক্ষিপ্ত পরিচয় দেওয়া আবশ্যক। লোকটি যেমন ধনী, তেমনি ভীষণ। একবার একজন প্রজার বেগার দেওয়ার উপলক্ষে ষোড়শীর সহিত ইহার অত্যন্ত মনোমালিন্ত ঘটে, যে-কথা কোন পক্ষই আজও বিস্তৃত হয় নাই। এব কেবল ঘোড়শীই নয়, এ অঞ্চলের সকলেই ইহাকে অত্যন্ত ভয় ৩৭