পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (পঞ্চম সম্ভার).djvu/৫১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জেনা-পাওনা শিরোমণি হতবুদ্ধি হইয়া গেলেন ; রায় মহাশয় মনে মনে অত্যন্ত কুপিত হইয়া তীক্ষু কণ্ঠে বলিলেন, কে তোমাকে বললে হৈম, সত্যি নয়, শুনি ? হৈম একটুখানি হাসিয়া কহিল, আমিই বলচি, সত্যি নয় বাবা । তার কারণ আমি কখনো অমন কথা বলা ত দূরে, মনেও করিনে। আমি ওঁকে দিয়েই পূজো করাবো। এতে আমার ছেলের কল্যাণই হোক আর অকল্যাণই হোক। ষোড়শীর প্রতি চাহিয়া বলিল, আপনি হয়ত আমাকে চিনতে পারচেন না, কিন্তু আমার আপনাকে তেমনি মনে আছে। চলুন মশিরে, আমাদের সময় বয়ে যাচ্চে। এই বলিয়া সে এক পদ অগ্রসর হইয়া বোধ হয় তাহার কাছেই যাইতেছিল, কিন্তু নিজের মেয়ের কাছে অপমানের এই নিদারুণ আঘাতে পিতা ধৈর্য্য হারাইয়া ফেলিলেন ; তিনি অকস্মাৎ উঠিয়া দাড়াইয়া ভীষণ-কণ্ঠে বলিয়া উঠিলেন, কখনো না । আমি বেঁচে থাকতে ওকে কিছুতেই মন্দিরে ঢুকতে দেব না। তারাদাস, বল তো ওর মায়ের কথাটা! একবার শুমুক সবাই। ভেবেছিলাম ওটা আর তুলতে হবে না, সহজেই হবে । শিরোমণি সঙ্গে সঙ্গে দাড়াইয়া উঠিয়া কহিলেন, না, তারাদাস, থাকৃ। ওর কথা আপনার মেয়ে হয়ত বিশ্বাস করবে না রায়মশাই! ও ই বলুক। চওঁীর দিকে মুখ করে ওই নিজের মায়ের কথা নিজেই বলে যাক। কি বলেন চৌধুরীমশাই ? তুমি কি বল হে যোগেন ভট্টচার্য ? কেমন, ওই নিজেই বলুক। গ্রামের এই দুই দিকৃপালের সাংঘাতিক অভিযোগে উপস্থিত সকলেই যেন বিভ্রান্ত হইয়া উঠিল। ষোড়শীর পাণ্ডুব ওষ্ঠাধর কি একটা পলিবার চেষ্টায় বারংবার কঁাপিতে লাগিল, মুহূৰ্ত্ত পরে হয়ত সে কি একটা বলিয়াও ফেলিত, কিন্তু, হৈম দ্রুতপদে তাহার কাছে আসিয়া হাতটা ধরিয়া ফেলিয়া শাস্ত দৃঢ়-স্বরে বলিল, না, আপনি কিছুতেই কোন কথা বলবেন না। পিতার মুখের প্রতি তীব্র দৃষ্টিপাত করিয়া কহিল, আপনার ওঁর বিচার করতে চান নিজেরাই করুন, কিন্তু ওঁর মায়ের কথা নিজের মুখ দিয়ে কবুল করিয়ে নেবেন, এতবড় অন্যায় আমি কোনমতেই হতে দেব না। ওঁর। যা পারেন করুন, চলুন আপনি আমার সঙ্গে মন্দিরের মধ্যে । এই বলিয়া সে আর কোনদিকে লক্ষ্য না করিয়া ষোড়শীকে একপ্রকার জোর করিয়াই সম্মুখের দিকে ঠেলিয়া লইয়া চলিল । 翻姆