পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (পঞ্চম সম্ভার).djvu/৭৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ কথাটা সমাপ্ত করিতেও হইল না। অনেকেই তারাrাসের হইয়া রাঙ্গী হইয়া গেল, এবং সে নিজে জিভ কাটিয়া গদগদ-কণ্ঠে কহিয়া উঠিল, অমন কথা মুখেও আনবেন না রায়মশাই, আপনারই ত সব ! হাতীর সঙ্গে মশার বিবাদ ! কি বল মা ? বলিয়া সে একটা ভাল কথা কিংবা একটুখানি ঘাড়-নাড়া কিংবা এমনি কিছু একটা শুনিবার প্রত্যাশায় হৈমর মুখের প্রতি চাহিল, এবং সেইসঙ্গে অনেকেরই দৃষ্টি তাহার উপরে গিয়া পড়িল। হৈম কিছুই কহিল না ; পরস্তু তাহার মুখের চেহারায় ষোড়শীর সেই প্রথম বিচারের দিনটাই সকলের দপ, করিয়া মনে পড়িয়া অপ্রত্যাশিত একটা নিরুৎসাহের মেঘ যেন কোথা হইতে আসিয়া পলকের নিমিত্ত ঘরের মধ্যে ছায়াপাত করিল—কিন্তু পলকমাত্রই। রায়মহাশয় সোজা হইয়া বসিয়া তামাকের জন্য একটা উচ্চ হাক দিয়া কহিলেন, বাবা নিৰ্ম্মল, যাত্রার সময়ট শিরোমণিমশায় দশটার মধ্যেই দেখে দিয়েচেন ; মেয়েদের কাও—একটু সকাল সকাল তৈরি না হতে পারলে বার হওয়াই যাবে না । নিৰ্ম্মল ঘাড় নাড়িয়া উঠিয়া দাড়াইল, এবং আর কিছু বলিবার পূৰ্ব্বেই হৈম নিঃশব্দে বাহির হইয়া গেল । মুখ হাত ধোয় হইতে স্নান পৰ্যন্ত সমাধা করিতে বোলসাহেবের বেশি বিলম্ব হইল না। বাটীর মধ্যে পা দিয়াই শাশুড়ীর উচ্চ-কণ্ঠ রান্নাঘর হইতে গুনা গেল, তিনি ময়েকে লইয়া পড়িয়াছেন । সে যে ঘরের মধ্যে কি করিতেছে তাহা ভাবিয়া পাইতেছেন না। নিৰ্ম্মল ঘরে ঢুকিয়া দেখিতে পাইল হৈম মেঝের উপর স্তব্ধ হইয়া বসিয়া আছে। আশ্চৰ্য্য হইয়া জিজ্ঞাসা করিল, ব্যাপার কি, তোমার মা যে ভারি বকাবকি করচেন ? তা ছাড়া সময় ত বেশি নেই। হৈম কহিল, ঢের সময় আছে—আজ ত আমাদের যাওয়া হতে পারে না । কেন ? হৈম বলিল, কেন কি ? ষোড়শীর এতবড় বিপদে তার সঙ্গে একবার দেখা না করেই যাবো ? নিৰ্ম্মল কহিল, বেশ ত, দেখা করেই এসো না । তারও ত সময় আছে। হৈম বলিল, আর তুমিই বা একবার দেখা না করে কি করে যেতে পারবে ? এ যে সেই গত-রাত্রির প্রতিক্রিয় তাহা মনে মনে বুঝিয়া নিৰ্ম্মল কহিল, চেষ্টা করলে তাও বোধ হয় পারা যাবে। অসম্ভব রকমের শক্ত কাজ নয়, কিন্তু আমি একবার দেখা করে গেলেই যে এ বিপদে তার সুবিধে হবে মনে হয় না। হৈম প্রবল বেগে মাথা নাড়িয়া শুধু কহিল, না, কোনমতেই সে হবে না। হবে না কেন ? তা ছাড়া আমার ষে সেই সৈদাবাদের চামড়ার মামলা আছে— •