পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (পঞ্চম সম্ভার).djvu/৯৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দেনা-পাওনা যেন বিদ্ধ করিল, কিন্তু কিছু একটা জবাব দিবার পূর্বেই সে পুনশ্চ সসন্ত্রমে কহিল, হুজুর একবার আপনাকে স্মরণ করেচেন । কোথায় ? এই যে কাছারী-বাড়িতে। সকাল থেকে এসেই প্রজার নালিশ শুনচেন । যদি অনুমতি করেন ত পালকি আনতে পাঠিয়ে দিই ? সকলে হা করিয়া শুনিতেছিল, ষোড়শীর মনে হইল তাহারা যেন এই কথায় হাসি চাপিবার চেষ্টা করিতেছে। তাহার ভিতরটা অগ্নিকাণ্ডের ন্যায় জ্বলিয়া উঠিল, কিন্তু মুহূৰ্ত্তে আত্মসংবরণ করিয়া কহিল, এটা তার প্রস্তাব, না তোমার সুবিবেচনা এককড়ি ? এককড়ি সসন্ত্রমে বলিল, আজ্ঞে, আমি ত চাকর, এ স্বয়ং হুজুরের আদেশ । ষোড়শী হাসিয়া কহিল, তোমার হুজুরের কপাল ভাল। জেলের ঘানি টানার বদলে পালকি চড়ে বেড়াচ্চেন, তাও আবার শুধু স্বয়ং নয়, পরের জন্যও ব্যবস্থা করেচেন। কিন্তু বল গে এককড়ি, আমার পালকি চড়বার ফুরমুং নেই—আমার ঢের কাজ । এককড়ি কহিল, ও-বেলায় কিংবা কাল সকালেও কি একটু সময় পাবেন না ? ষোড়শী কহিল, না । এককড়ি কহিল, কিন্তু হলে যে ভালো হ’তো ! আর দশজন প্রজার যে নালিশ আছে। ষোড়শী কঠোর-স্বরে উত্তর দিল, বিচার করবার মত বিদ্যে-বুদ্ধি থাকে ত তার নিজের প্রজার করুন গে। কিন্তু আমি তোমার হুজুরের প্রজা নই, আমার বিচার করবার জন্যে রাজার আদালত আছে। এই বলিয়া সে গামছাট কাধের উপর ফেলিয়া পুষ্করিণীর উদ্দেশ্বে দ্রুতপদে প্রস্থান করিল। SN9 জমিদারের নিভৃত নিবাস সাজাইতে-গুছাইতে দিন-চারেক গিয়াছে। জনশ্রুতি এইরূপ যে, হুজুর এবার একাদিক্ৰমে মাস-দুই চণ্ডীগড়ে বিশ্রাম করিয়া যাইবেন । আজ সকালবেলাতেই উত্তরদিকের বড় হলটায় মজলিশ বসিয়াছিল। ঘর-জোড়া কার্পেট পাতা, তাহার উপরে সাদা জাজিম বিছানো এবং মাঝে মাঝে দুই-চারিট। মোট তাকিয়া ইতস্তত: বিক্ষিপ্ত। গৃহের একধারে আজ গ্রামের মাতব্বরের বার দিয়া বসিয়াছিলেন–জমিদারের কাছে র্তাহাদের মস্ত নালিশ ছিল। রায়মহাশয়