পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (প্রথম সম্ভার).djvu/১০২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ তখন সকালবেলার আলোর মধ্যে যে কথাগুলো শুধু নিরর্থক হাসির উপাদান আনিয়া দিয়াছিল, এখন সেই কথাগুলোই এই নির্জন গাঢ় অন্ধকারের মধ্যে আর একপ্রকার চেহারা লইয়া দেখা দিল । মনে হইতে লাগিল, জগতের প্রত্যক্ষ সত্য যদি কিছু থাকে, ত সে মরণ । এই জীবনব্যাপী ভাল-মন্দ, স্থখ-দুঃখের অবস্থাগুলা ষেন আতসবাজির বিচিত্র সাজ-সরঞ্জামের মত শুধু একটা কোন বিশেষ দিনে পুড়িয়া ছাই হইবার জন্যই এত যত্বে এত কৌশলে গড়িয়া উঠিতেছে। তবে মৃত্যুর পরপারের ইতিহাসটা যদি কোন উপায়ে শুনিয়া লইতে পারা যায়, তবে তার চেয়ে লাভ আর আছে কি? তা সে যাই বলুক এবং যেমন করিয়াই বলুক না। হঠাৎ কাহার প্রায়ের শব্দে ধ্যান ভাঙ্গিয়া গেল। ফিরিয়া দেখিলাম শুধু অন্ধকার, কেহ কোথাও নাই। একটা গা-ঝাড়া দিয়া উঠিয়া দাড়াইলাম। গত রাত্রির কথা স্মরণ করিয়া নিজের মনে হাসিয়া বলিলাম, না, আর বসে থাকা নয়। কাল ডান কানের উপর নিশ্বাস ফেলে গেছে, আজ এসে যদি বঁ। কানের উপর শুরু করে দেয় ত সে বড় সোজা হবে না । কতক্ষণ যে বসিয়া কাটাইয়াছি, এখন রাত্ৰি কত ঠিক ঠাহর করিতে পারিলাম না। বোধ হয় যেন দ্বিপ্রহরের কাছাকাছি । কিন্তু এ কি ? চলিয়াছি ত চলিয়াছি—এই সঙ্কীর্ণ পায়ে-চলা পথ আর শেষ হয় না। এতগুলা তাবুর একটা আলোও যে চোখে পড়ে না । অনেকক্ষণ হইতেই সম্মুখে একটা বাশঝাড় দৃষ্টিরোধ করিয়া বিরাজ করিতেছিল, হঠাৎ মনে হইল, কৈ এটা ত অসিবার সময় লক্ষা করি নাই । দিক্‌ ভুল করিয়া ত আর একদিকে চলি নাই ? আরো খানিকটা অগ্রসর হইতেই টের পাইলাম। সেটা বাশঝাড় নয়, গোটা-কয়েক তেঁতুলগাছ জড়াজড়ি করিয়া দিগন্ত আবৃত করিয়া অন্ধকার জমাট বাধাইয়া দাড়াইয়া আছে, তাহারই নীচে দিয়া পথটা জাকিয়া-বাকিয়া অদৃশ্য হইয়া গিয়াছে। জায়গাটা এমনি অন্ধকার যে নিজের হাতটা পৰ্য্যন্ত দেখা যায় না। বুকের ভিতরটা কেমন যেন গুর গুরু করিয়া উঠিল—এ যাইতেছি কোথায়? চোখ-কান বুজিয়া কোনমতে সেই তেঁতুলতলাট পার হইয়া দেখি, সম্মুখে অনন্ত কালো আকাশ যতদূর দেখা যায়, ততঃ বিস্তৃত হইয়া আছে। কিন্তু স্বমুখে ওই উচু জায়গাটা কি ? নদীর ধারে সরকারী বাধ নয় ত? বাধই ত বটে! পা-দুটা যেন ভাঙ্গিয়া আসিতে লাগিল ; তবুও টানিয়া টানিয়া কোনমতে তাহার উপর উঠিয়া দাড়াইলাম। ষা ভাবিয়ছিলাম, ঠিক তাই! ঠিক নীচেই সেই মহাশ্মশান । আবার কাহার পদশৰ স্থমূখ দিয়াই নীচে শ্মশানে গিয়া মিলাইয়া গেল। এইবার টলিয়া N