পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (প্রথম সম্ভার).djvu/১২৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ আমি বলিলাম, আমাকে এমনি অকৃতজ্ঞ পেয়েছ ? তুমি আমার এত করলে, আর শেষে তোমাকেই চুরি করব ? আমি এত লোভী নই। পিয়ারীর মুখ স্নান হইয়া গেল। কথাটায় সে যে ব্যথা পাইতে পারে বলিবার সময় তাহা ভাবি নাই। ব্যথা দিবার ইচ্ছাও ছিল না, থাকা স্বাভাবিকও নয়। বিশেষতঃ দুই-একদিনের মধ্যেই আমি প্রস্থানের সঙ্কল্প করিতেছিলাম ; বেফাস কথাটা সারিয়া লইবার জন্য জোর করিয়া হাসিয়া বলিলাম, নিজের জিনিস বুঝি কেউ চুরি করতে আসে? এই বুঝি তোমার বুদ্ধি ? কিন্তু এত সহজে তাকে ভুলানো গেল না। মলিন-মুখে কহিল, তোমাকে আর কৃতজ্ঞ হতে হবে না—দয়া করে সে সময়ে যে একটা খবর পাঠিয়েছিলে, এই আমার ঢের । তাহার শুদ্ধস্নাত প্রফুল্ল-হাসি মুখখানি এই রৌদ্রোজ্জল সকালবেলাটাতেই মান করিয়া দিলাম দেখিয়া একটা বেদনার মত বুকের মধ্যে বাজিতে লাগিল। সেই হাসিটুকুর মধ্যে কি যেন একটা মাধুর্ঘ্য ছিল যে, তাহা নষ্ট হইবামাত্র ক্ষতিটা স্বম্পষ্ট হইয়া উঠিল। ফিরিয়া পাইবার আশায় তৎক্ষণাৎ অমৃতপ্ত-স্বরে বলিয়া উঠিলাম, লক্ষ্মী, তোমার কাছে ত লুকানো কিছু নেই, সবই ত জান । তুমি না গেলে আমাকে সেই ধুলোবালির উপরেই মরে থাকতে হত, কেউ ততদূর গিয়ে একবার হাসপাতালে পাঠাবার চেষ্টা পৰ্য্যন্তও করত না । সেই যে চিঠিতে লিখেছিলে, মুখের দিনে না হোক দুঃখের দিনে যেন মনে করি—নেহাৎ পরমায়ু ছিল বলেই কথাটা মনে পড়েছিল, তা এখন বেশ বুঝতে পারি। পারো ? নিশ্চয় | তা হ’লে আমার জন্যই প্রাণটা ফিরে পেয়েছ বল ? তাতে আমার কোন সন্দেহ নেই। তা হ’লে ওটা দাবী করতে পারি বল ? তা পার। কিন্তু আমার প্রাণটা এত তুচ্ছ যে, তার পরে তোমার লোভ হওয়াই উচিত নয় । পিয়ারী এতক্ষণ পরে একটু হাসিয়া বলিল, তবু ভাল যে নিজের দামটা এতদিনে টের পেয়েচ । কিন্তু পরক্ষণেই গম্ভীর হইয়া কহিল, তামাসা থাকৃ—অম্বখ তো একরকম ভাল হ’ল, এখন যাবে কবে মনে করচ ? g তাহার প্রশ্ন ঠিক বুঝিতে পারিলাম না। গম্ভীর হইয়া কহিলাম, কোথাও যাবার ত আমার এখন তাড়া নেই। তাই আরও কিছুদিন থাকৃব ভাবছি। ১২৯