পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (প্রথম সম্ভার).djvu/১৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ঐকান্ত চোখ বুজিয়া থেলো হকায় ধুমপান করিতেছেন। দেউড়িতে হিন্দুস্থানী পেয়াদাদের তুলসীদাসী সুর শুনা যাইতেছে, এবং ভিতরে আমরা তিন ভাই, মেজদার কঠোর তত্ত্বাবধানে নিঃশব্দে বিদ্যাভ্যাস করিতেছি । ছোড়দা, যতীনদ ও আমি তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীতে পড়ি এবং গম্ভীর-প্রকৃতি মেজদা বার-দুই এণ্ট সি ফেল করিবার পর গভীর মনোযোগের সহিত তৃতীয়বারের জন্য প্রস্তুত হইতেছেন। তাহার প্রচও শাসনে একমুহূৰ্ত্ত কাহারো সময় নষ্ট করিবার জো ছিল না । আমাদের পড়ার সময় ছিল সাড়ে সাতটা হইতে নয়ট । এই সময়টুকুর মধ্যে কথাবাৰ্ত্ত কহিয়া মেজদা’র ‘পাশের পড়া'র বিঘ্ন না করি, এই জন্য তিনি নিজে প্রত্যহ পড়িতে বসিয়াই কাচি দিয়া কাগজ কাটিয়া বিশ ত্রিশখানি টিকিটের মত করিতেন। তাহার কোনটাতে লেখা থাকিত ‘বাইরে’, কোনটাতে ‘থুথুফেলা", কোনটাতে ‘নাকঝাড়া’, কোনটাতে ‘তেষ্টা পাওয়া’ ইত্যাদি। যতীনদ একটি ‘মাকঝাড়া টিকিট লইয়া মেজদা’র স্বমুখে ধরিয়া দিলেন। মেজদা তাহাতে স্বাক্ষর করিয়া লিথিয়া দিলেন— স্থ –আটটা তেত্রিশ মিনিট হইতে আটটা সাড়ে চৌত্ৰিশ মিনিট পৰ্য্যস্ত, অর্থাৎ এই সময়টুকুর জন্য সে নাক ঝাড়িতে যাইতে পারে। ছুটি পাইয়া যতীনদী টিকিট হাতে উঠিয়া যাইতেই ছোড়দা খুধুফেলা টিকিট পেশ করিলেন । মেজদা ‘না’ লিখিয়া দিলেন। কাজেই ছোড়দা মুখ ভারি করিয়া মিনিট-দুই বসিয়া থাকিয়া "তেষ্ট পাওয়া আজ্জি দাখিল করিয়া দিলেন । এবার ময়ুর হুইল । মেজদা সই করিয়া লিখিলেন -হু-আটটা একচল্লিশ মিনিট হইতে আটটা সাতচল্লিশ মিনিট পৰ্য্যস্ত। পরওয়ানা লইয়া ছোড়দা হাসিমুখে বাহির হইতেই যতীনদা ফিরিয়া আসিয়া হাতের টিকিট দাখিল করিলেন । মেজদা ঘড়ি দেখিয়া সময় মিলাইয়া একটা খাতা বাহির করিয়া সেই টিকিট গদ দিয়া আঁটিয়া রাখিলেন । সমস্ত সাজ-সরঞ্জাম র্তাহার হাতের কাছেই মজুত থাকিত । সপ্তাহ পরে এইসব টিকিটের সময় ধরিয়া কৈফিয়ৎ তলব করা হইত। এইরূপে মেজদা’র অত্যন্ত সতর্কতায় এবং মুশৃঙ্খলায় আমাদের এবং তাহার নিজের কাহারও এতটুকু সময় নষ্ট হইতে পাইত না। প্রত্যহ এই দেড়ঘণ্টা কাল অতিশয় বিদ্যাভ্যাস করিয়া রাত্রি নয়টার সময় আমরা যখন বাড়ির ভিতরে শুইতে আসিতাম, তখন মা সরস্বতী নিশ্চয়ই ঘরের চৌকাঠ পর্য্যস্ত আমাদিগকে আগাইয়। দিয়া যাইতেন ; এবং পরদিন ইস্কুলে ক্লাশের মধ্যে যে সকল সম্মানসৌভাগ্য লাভ করিয়া ঘরে ফিরিতাম, সে ত আপনারা বুঝিতেই পারিতেছেন। কিন্তু মেজদা’র দুর্ভাগ্য, তাহার নিৰ্ব্বোধ পরীক্ষকগুলা র্তাহাকে কোনদিন চিনিতেই পারিল না। নিজের এবং পরের বিদ্যাশিক্ষার প্রতি এরূপ প্রবল অমুরাগ, সময়ের ר