পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (প্রথম সম্ভার).djvu/২২৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পরেশ বুঝিল এ রাগের কথা। কিছুক্ষণ চুপ করিয়া দাঁড়াইয়া তাহার কাপড়ের কথাটা স্মরণ হইতেই আরও একটা কথা মনে পড়িয়া গেল।আস্তে আস্তে কহিল, ভট্‌চায্যিমশায়ের কাছে জেনে আসব মাঠান?

কে ভট্‌চায্যিমশাই? কি জেনে—বলিয়া উৎসুককণ্ঠে প্রশ্ন করিয়াই বিজয়া মুখ ফিরাইয়াই থামিয়া গেল। মুখের বাকী কথাটুকু তাহার মুখেই রহিয়া গেল, আর বাহির হইল না। বারান্দার উপর ঠিক সম্মুখেই অকস্মাৎ নরেন্দ্রকে দেখা গেল এবং পরক্ষণেই সে ঘরে পা দিয়া হাত তুলিয়া বিজয়াকে নমস্কার করিল।

পরেশ বলিল, কোথায় গেছে নরেন্দরবাবু—

বিজয়া প্রতি-নমস্কারেরও সময় পাইল না, নিদারুণ লজ্জায় সমস্ত মুখ রক্তবর্ণ করিয়া ব্যস্তসমস্ত হইয়া বলিয়া উঠিল, আচ্ছা যা, যা,—আর জিজ্ঞাসা করবার দরকার নেই।

পরেশ বুঝিল, এও রাগের কথা। ক্ষুণ্ণস্বরে কহিল, কাণা ভট্‌চায্যিমশাই ত তেনাদের পাশের বাড়িতেই থাকে মাঠান। গোবিন্দ-দোকানী যে বললে—

বিজয়া শুষ্ক হাসিয়া কহিল, আসুন, বসুন।

পরেশের প্রতি চাহিয়া বলিয়া উঠিল, তুই এখন যা না পরেশ। ভারী ত কথা, তার আবার—সে আর একদিন তখন জেনে আসিস না হয়। এখন যা।

পরেশ চলিয়া গেলে নরেন্দ্র জিজ্ঞাসা করিল, আপনি নরেনবাবুর খবর জানতে চান? তিনি কোথায় আছেন তাই?

অস্বীকার করিতে পারিলেই বিজয়া বাঁচিত, কিন্তু মিথ্যা বলিবার অভ্যাস তাহার ছিল না। সে কোনমতে ভিতরের লজ্জা দমন করিয়া বলিল, হাঁ। তা সে একদিন জানলেই হবে।

নরেন্দ্র জিজ্ঞাসা করিল, কেন? কোন দরকার আছে?

প্রশ্ন তাহার কানের মধ্যে ঠিক বিদ্রূপের মত শুনাইল। কহিল, দরকার ছাড়া কি কেউ কারও খবর জানতে চায় না?

কেউ কি করে না করে, সে ছেড়ে দিন। কিন্তু তার সঙ্গে তো আপনার সমস্ত সম্বন্ধ চুকে গেছে; তবে আবার কেন তার সন্ধান নিচ্চেন? দেনাটা কি সব শোধ হয়নি?

বিজয়ার মুখের উপর ক্লেশের চিহ্ন দেখা দিল, কিন্তু সে উত্তর দিল না। নরেন নিজেও তাহার ভিতরের উদ্বেগ সম্পূর্ণ গোপন করিতে পারিল না।পুনরায় কহিল, যদি আরও কিছু ঋণ বার হয়ে থাকে তা হলেও আমি যতদূর জানি, তার