ভিতরটা দুলিয়া দুলিয়া উঠিতেছে, প্রবল নিশ্বাসে তাহার এলোচুল উড়িয়া সর্বাঙ্গ কণ্ঠকিত করিতেছে, হাত হাতে ঠেকিয়া দেহ অবশ করিয়া আনিতেছে—তাহার কি আসে-যায় জীবাণুর স্বচ্ছদেহের অভ্যন্তরে কি আছে, না আছে, দেখিয়া? কে ম্যালেরিয়ায় গ্রাম উজাড় করিতেছে, আর কে যক্ষ্মায় গৃহ শূন্য করিতেছে চিনিয়া রাখিয়া তাহার লাভ কি? করিলেও ত সে তাহাদের নিবারণ করিতে পারিবে না! সে ত আর ডাক্তার নয়! মিনিট-দশেক ধস্তাধস্তি করিয়া নরেন অত্যন্ত বিরক্ত হইয়া সোজা উঠিয়া বসিল; কহিল, যান, এ আপনার কাজ নয়। এমন মোটাবুদ্ধি আমি জন্মে দেখিনি।
বিজয়া প্রাণপণে হাসি চাপিয়া কহিল, মোটাবুদ্ধি আমার, না আপনি বোঝাতে পারেন না।
নিজের রূঢ় কথায় নরেন মনে মনে লজ্জিত হইয়া কহিল, আর কি করে বোঝাবো বলুন? আপনার বুদ্ধি আর কিছু সত্যিই মোটা নয়, কিন্তু আমার নিশ্চয় বোধ হচ্চে, আপনি মন দিচ্চেন না। আমি বকে মরচি, আর আপনি মিছামিছি ওটাতে চোখ রেখে মুখ নীচু করে শুধু হাসচেন।
কে বললে আমি হাসচি?
আমি বলচি।
আপনার ভুল।
আমার ভুল? আচ্ছা বেশ, যন্ত্রটা ত আর ভুল নয়, তবে কেন দেখতে পেলেন না?
যন্ত্রটা আপনার খারাপ, তাই!
নরেন বিস্ময়ে অবাক্ হইয়া বলিল, খারাপ! আপনি জানেন এ রকম পাওয়ারফুল মাইক্রস্কোপ্ এখানে বেশী লোকের নেই! এমন স্পষ্ট দেখাতে—
বলিয়া স্বচক্ষে একবার যাচাই করিয়া লইবার অত্যন্ত ব্যগ্রতায় ঝুঁকিতে গিয়া বিজয়ার মাথার সঙ্গে তাহার মাথা ঠুকিয়া গেল।
উঃ—করিয়া বিজয়া মাথা সরাইয়া লইয়া হাত বুলাইতে লাগিল। নরেন অপ্রস্তুত হইয়া কি একটা বলিবার চেষ্টা করিতেই সে হাসিয়া ফেলিয়া কহিল, মাথা ঠুকে দিলে কি হয় জানেন? শিঙ্ বেরোয়।
নরেনও হাসিল। কহিল, বেরোতে হলে আপনার মাথা থেকেই তাদের বার হওয়া উচিত।
তা বৈ কি! আপনার এই পুরোনো ভাঙা যন্ত্রটাকে ভালো বলিনি বলে, আমার মাথাটা শিঙ্ বেরোবার মত মাথা!