পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (প্রথম সম্ভার).djvu/২৫৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আঙুলের দিকে চাহিয়া থাকিয়া বলিল, আপনার আঙুলগুলো কি লোহার? ঐ জানালাটা বন্ধ থাকলে পিছন থেকে সজোরে ধাক্কা না দিয়ে শুধু টেনে খুলতে পারে, এমন লোক আমি দেখিনি।

কথা শুনিয়া নরেন হো হো করিয়া উচ্চহাস্যে ঘর ভরিয়া দিল। এ সেই হাসি। মনে পড়িয়া বিজয়ার সর্বাঙ্গে কাঁটা দিয়া উঠিল। হাসি থামিলে নরেন সহজভাবে কহিল, সত্যি, আমার আঙুলগুলো ভারী শক্ত। জোরে টিপে ধরলে যে-কোন লোকের বোধ করি হাত ভেঙ্গে যায়।

বিজয়া হাসি চাপিয়া গম্ভীরমুখে কহিল, আপনার মাথাটা তার চেয়েও শক্ত। ঢুঁ মারলে—

কথাটা শেষ না হইতেই নরেন আবার তেমনি উচ্চহাস্য করিয়া উঠিল। এই লোকটির হাসি প্রভাতের আলোর মত এমনি মধুর, এমনি উপভোগের বস্তু যে, কোনমতেই যেন লোভ সংবরণ করা যায় না।

নরেন পকেট হইতে দু’শ টাকার নোট বাহির করিয়া টেবিলের উপর রাখিয়া দিয়া বলিল, সেইজন্যেই এসেছি। আমি জোচ্চোর, আমি ঠক, আরও কত কি গালাগালি ওই ক'টা টাকার জন্যে আমাকে দিয়ে পাঠিয়েছিলেন। আপনার টাকা নিন—দিন আমার জিনিস।

বিজয়ার মুখ পলকের জন্য আরক্ত হইয়া উঠিল; কিন্তু তখনই আপনাকে সামলাইয়া লইয়া কহিল, আর কি কি বলে পাঠিয়েছিলুম, বলুন ত?

নরেন কহিল, অত আমার মনে নেই। সেটা আনতে বলে দিন, আমি সাড়ে ন'টার গাড়িতেই কলকাতা ফিরে যাবো। ভাল কথা, আমি কলকাতাতেই বেশ একটা চাকরি পেয়েচি—অতদূর আর যেতে হয়নি।

বিজয়ার মুখ উজ্জ্বল হইয়া উঠিল, কহিল, আমার ভাগ্য ভাল।

নরেন বলিল, হাঁ। কিন্তু আমার আর সময় নেই, ন'টা বাজে—চক্ষের নিমিষে বিজয়ার মুখের দীপ্তি নিবিয়া গেল; কিন্তু নরেন তাহা লক্ষ্যও করিল না, কহিল, আমাকে এখুনি বার হতে হবে—সেটা আনতে বলে দিন।

বিজয়া তাহার মুখের প্রতি চোখ তুলিয়া বলিল, এই শর্ত কি আপনার সঙ্গে হয়েছিল যে, আপনি দয়া করে টাকা এনেছেন বলেই তাড়াতাড়ি ফিরিয়ে দিতে হবে?

নরেন্দ্র লজ্জিত হইয়া কহিল, না, তা নয় সত্যি; কিন্তু আপনার ত ওতে দরকার নেই।

আজ নেই বলে কোন দিন দরকার হবে না এ আপনাকে কে বললে?