পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (প্রথম সম্ভার).djvu/৩৫১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তৃতীয় পরিচ্ছেদ তাহার পর কতদিন অতিবাহিত হইয়া গেল। সরযু বড় হইয়াছে। স্বামীকে সে কত যত্ন করিতে শিথিয়াছে। চন্দ্রনাথ বুঝিতে পারে যে, সে কথা কহিবার পূর্বেই সরযু তাহার মনের কথা বুৰিয়া লয়। কিন্তু সে যদি শুধু দাসী হইত, তাহা হইলে সমস্ত বিশ্ব খুজিয়াও চন্দ্রনাথ এমন আর একটি দাসী পাইত না, কিন্তু শুধু দাসীর জগুই কেহ বিবাহ করে না—স্ত্রীর নিকট আরও কিছুর আশা রাখে । মনে হয়, নালীর আচরণের সহিত স্ত্রীর আচরণটি সৰ্ব্বতোভাবে মিলিয়া না গেলেই ভাল হয়। সরযুর ব্যবহার বড় নিরীহ, বড় মধুর, কিন্তু দাম্পত্যের স্বনিবিড়-পরিপূর্ণ স্লখ কিছুতেই যেন গড়িয়া তুলিতে পারিল না । তাই এমন মিলনে, এত যত্ন-আদৱেও উভয়ের মধ্যে একটা দূরত্ব, একটা অন্তরাল কিছুতেই সরিতে চাহিল না। একদিন সে সরযুকে হঠাৎ বলিল, তুমি এত ভয়ে ভয়ে থাক কেন ? আমি কি কোন দুৰ্ব্ব্যবহার করি ? সরষু মনে মনে বলিল, এ কথার উত্তর কি তুমি নিজে জনো না ? তাহার পর ভাবিল,তুমি দেবতা, কত উচ্চ, কত মহৎ,−আর আমি ? সে তুমি আজও জানো না ? তুমি আমার প্রতিপালক, আমি শুধু তোমার আশ্রিতা। তুমি দাত, আমি ভিখারিণী । তাহার সমস্ত হৃদয় কৃতজ্ঞতার পরিপূর্ণ তাই ভালবাসা মাথা ঠেলিয়া উপরে উঠিতে পারে না,—অন্তঃসলিলা ফন্তুর মত নিঃশব্দে ধীরে ধীরে হৃদয়ের অন্তরতম প্রদেশে লুকাইয়া বহিতে থাকে, উচ্ছ,স্থল হইতে পায় না। তেমনি অবিশ্রাম বহিতে লাগিল; কিন্তু চন্দ্রনাথ তাহার সন্ধান পাইল না। অতি বড় দুর্তাগার যেমন জীবনের মাঝে ভগবানকে খুজিয়া পায় না, সরযুর ভিতরেও সে তেমনি ভালবাসা দেখিতে পাইল না। কিন্তু আজ অকস্মাৎ উজ্জল দীপালোকে যখন সে দেখিত পাইল, পদ্মের মত ডাগর সরযুর চক্ষু দুটিতে অশ্র ছাপাইয়া উঠিয়াছে, তখন কাতর হইয়া সহসা তাহাকে সে কাছে টানিয়া লইল । বুকের উপর মুখ লুটাইয়া পড়িল। চন্দ্রনাথ কহিল, থাকৃ, ওসব কথায় আর কাজ নেই—বলিয়া দুই হাতে স্ত্রীর মুখ তুলিয়া ধরিল, মুদিত চক্ষের উপর সরযু একটা তপ্ত-নিশ্বাস জমুণ্ডৰ ’ কৰিল । চন্দ্রনাথ কহিল, একবার চেয়ে দেখ দেখি সরযুর চোখের পাতা দুইটি আকুলভাবে পরম্পরকে জড়াইয়া ধরিল, সে কিছুতে চাহিতে পারিল না। 曾9领 չնI-96