পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (প্রথম সম্ভার).djvu/৩৫৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চন্দ্রনাথ সাধু হাসিতে লাগিল । - ঠানদিদি বলিলেন, তা শোন । এ গায়ে তোমার একটিও সাধী নাই বড়লোকের বাঞ্চিলেও বটে, তোমার মামীর বচনের গুণেও বটে, কেউ তোমার কাছে আসে না”জানি। আমি তাই আসব। আমার কিন্তু একটা সম্পর্ক না হ'লে চলে না, তাই আজ ‘সই’ পাতালুম। আর বুড়ো হয়েছি বটে, কিন্তু হরিনামের মালা নিয়েও সারা নিট কাটাতে পারি না। আমি রোজ আ1সব | r সরযু কহিল রোজ আসবেন। - হরিবালা গর্জিয়া উঠিলেন, আসবেন কি লা? বল, সই, তুমি রোজ এল । তুই’ বলতে পারবিনে, না ? •. সরযু হাসিয়া ফেলিয়া কহিল, রক্ষা কর ঠানূদিদি, গলায় ছুরি দিলেও তা পারব न । ঠান্দিদিও হাসিয়া ফেলিলেন, বলিলেন, তা না হয় নাই বলিস। কিন্তু 'তুমি’ ৰলতেই হবে। বল—সই, তুমি রোজ এস । সরযু চোখ নীচু করিয়া সলজ্জহান্তে কহিল, সই তুমি রোজ এস । হরিবালার যেন একটা দুর্ভাবন কাটিয়া গেল। তিনি কহিলেন, আসব। পরদিন হইতে হরিবালা প্রায়ই আসেন, শাত-কৰ্ম্ম থাকিলেও একবার হাজির দিয়া যান। ক্রমশঃ পাতানে সম্বন্ধ গাঢ় হইয়া আসিল । সময়ে সরযুও ভুলিল ষে হরিবালা তার সমবয়সী নহেন, কিংবা এই গলায় গলায় মেশামেশি সকলের কাছে তেমন মুন্দর দেখিতে হয় না। এই অন্তরঙ্গত। হরকালীর কেমন লাগিত, বলিতে পারি না, কিন্তু চন্দ্রনাথের বেশ লাগিত। স্ত্রীর সহিত এ বিষয়ে প্রায়ই তাহার কথা-বাৰ্ত্ত হইত। ঠানূদিদির এই স্বল্পতায় সে আমোদ বোধ করিত। আরও একটু কারণ ছিল। চন্দ্রনাথ স্ত্রীকে বড় স্নেহ করিত ; সমস্ত হৃদয় জুড়িয়া ভালবাসা না থাকিলেও স্নেহের অভাব ছিল না। সে মনে করিত, সকলের ভাগ্যেই একরূপ স্ত্রী মিলে না। কাহারো বা স্ত্রী দাসী, কাহারো বা বন্ধু, কাহারো বা প্ৰভু ! তাহারভাগ্যে যদি একটি পুণ্যবতী, পবিত্র, সাধী এবং স্নেহময়ী দাসী মিলিয়াছে ত তাহতে অমুখী হইয়া কি লাভ করিবে? তাহার উপর একটা কথা প্রায়ই তাহার মনে হয়, সেটা সরযুর বিগত দিনের দুঃখের কাহিনী। শিশুকালট। তাহার বড় দুঃখেই অতিবাহিত হইয়াছে। দুঃখিনীর কন্যা হয় ত সারজীবনটা দুখেই কাটাইত ; হয় ত বা এতদিনে কোন দুর্ভাগ্য দুশ্চরিত্রের হাতে পড়িয়া, চক্ষের জলে ভাসিত, না হয়, দাসীবৃত্তি করিতে গিয়া শত অত্যাচার উৎপীড়ন সম্ব Voß?