চন্দ্রনাথ আমি মেটাব। কিন্তু কিছুমাত্র অনুসন্ধান না ক’রেই— ইচ্ছা হয়, অনুসন্ধান পরে কোরো । কিন্তু একথা যে মিথ্যা নয়, তা আমি তোমাকে নিশ্চয় বললাম। চন্দ্রনাথ বাট ফিরিয়া আসিয়া নিজের দ্বার রুদ্ধ করিয়া খাটের উপর গুইয়া পড়িল ; মণিশঙ্কর বলিয়াছেন, সরযুকে ত্যাগ করিতে হইবে । শয্যার উপর পড়িয়া শূন্ত-দৃষ্টিতে উপরের দিকে চাহিয়া মানুষ ঘুমাইয়া যেমন করিয়া কথা কহে, ঠিক তেমনি করিয়া সে ঐ একটা কথা পুনঃপুনঃ আবৃত্তি করিতে লাগিল । সরযুকে ত্যাগ করিতে হইবে, সে বেতার কন্যা । কথাটা সে অনেকবার অনেক রকম করিয়া নিজের মুখে উচ্চারণ করিল, নিজে কান পাতিয়া শুনিল, কিন্তু মনে বুঝিতে পারিল না। সে সরযুকে ত্যাগ করিয়াছে,—সরযু বাটীর মধ্যে নাই, ঘরের মধ্যে নাই, চোখের স্বমুখে নাই, চোখের আড়ালে নাই, সে আর তাহার নাই। বস্তুটা যে ঠিক কি এবং কি তাহার সম্পূর্ণ আকৃতি, সহস্ৰ চেষ্টাতেও তাহা সে নিজের মধ্যে উপলব্ধি করিতে পারিল না । অথচ মণিশঙ্কর বলিয়াছেন, কাজটা শক্ত নয় । কাজটা শক্ত কি সহজ, পারা যায় কি যায় না, তাহা হৃদয়ঙ্গম করিয়া লইবার মত শক্তি মামুষের হৃদয়ে আছে কি না, তাহাও সে স্থির করিতে পারিল না। সে নিজীবের মত পড়িয়া রহিল এবং এক সময়ে ঘুমাইয়া পড়িল । ঘুমাইয়া কত কি স্বপ্ন দেখিল—কোনটা স্পষ্ট, কোনটা ঝাপসা—ঘুমের ঘোরে কি এক রকমের অস্পষ্ট ব্যথা তাহার সর্বাঙ্গে যেন নড়িয়া বেড়াইতে লাগিল, তাহাও সে অনুভব করিল, তাহার পর সন্ধ্য। যখন হয় হয়, এমন সময় সে জাগিয়া উঠিয়া বসিল । তাহার মানসিক অবস্থা তখন এরূপ দাড়াইয়াছে যে, মায়া-মমতার ঠাই নাই, রাগ করিবার, ঘৃণা করিৰারও ক্ষমতা নাই। শুধু একটা অব্যক্ত, অবোধ্য লজ্জার গুরুভারে তাহার সমস্ত দেহ-মন ধীরে ধীরে অবশ ও অবনত হইয়া একেবারে মাটির সহিত মিশিয়া যাইবার উপক্রম করিতেছে । এমনি সময়ে বাতি জালিয়া আনিয়া ভূত্য রুদ্ধ-দ্বারে ঘা দিতেই চন্দ্রনাথ ধড়ফড় করিয়া উঠিয়া পড়িল এবং কপাট খুলিয়া দিয়া ঘরের মধ্যে ঘুরিয়া বেড়াইতে লাগিল । চোখের উপর আলো লাগিয়া তাহার মোহের ঘোর আপন আপনিই স্বচ্ছ হুইয়ু৷ জাসিয়াছিল, এবং তাহারই ভিতর দিয়া এখন হঠাৎ সন্দেহ হইল, কথাটা সত্য কি ? সরষু নিজে জানে কি ? জানিয়া শুনিয়া তাহার সরযু তাহারই এত বড় সৰ্ব্বনাশ করিবে, এ কথা চন্দ্রনাথ কিছুতেই বিশ্বাস করিতে পারিল না । সে দ্রুতপদে ঘর ছাড়িয়া সরযুর শয়নকক্ষে আসিয়া উপস্থিত হইল । Moo ১ম—৪৭