পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (প্রথম সম্ভার).djvu/৯২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ বেশ একটু জোরে হাওয়া উঠিল। অনেকেই হয়ত জানে না যে মড়ার মাথার ভিতর দিয়া বাতাস বহিলে ঠিক দীর্ঘশ্বাস ফেলা গোছের শব্দ হয়। দেখিতে দেখিতে আশে পাশে, স্বমুখে, পিছনে দীর্ঘশ্বাসের যেন ছড়াছড়ি পড়িয়া গেল। ঠিক মনে হইতে লাগিল, কত লোক যেন আমাকে ঘিরিয়া বসিয়া, অবিশ্রাম হা-হুতাশ করিয়া নিশ্বাস ফেলিতেছে ; এবং ইংরেজীতে যাহাকে বলে 'uncanny feeling' ঠিক সেই ধরনের একটা অস্বস্তি সমস্ত শরীরটাকে যেন গোটা-দুই বাকানি দিয়া গেল। সেই শকুনির বাচ্চাটা তখনও চুপ করে নাই, সে যেন পিছনে আরও বেশী করিয়া গোঙাইতে লাগিল। বুঝিলাম ভয় পাইয়াছি। বহু অভিজ্ঞতার ফলে বেশ জানিতাম, এ ষেস্থানে আসিয়াছি, এখানে এই বস্তুটাকে সময়ে চাপিতে না পারিলে মৃত্যু পৰ্য্যস্ত অসম্ভব ব্যাপার নয়। বস্তুত এইরূপ ভয়ানক জায়গায় ইতিপূৰ্ব্বে আমি কখনো একাকী আসি নাই। একাকী সে স্বচ্ছন্দে আসিতে পারিত, সে ইন্দ্ৰ— আমি নয় । অনেকবার তাহার সঙ্গে অনেক ভয়ানক স্থানে গিয়া গিয়া আমারও একটা ধারণা জন্মিয়াছিল যে ইচ্ছা করিলে আমিও তাহার মত এইসব স্থানে একাকী আসিতে পারি। কিন্তু সেটা যে কতবড় ভ্রম এবং আমি যে শুধু কোকের উপরেই তাহাকে অনুসরণ করিতে গিয়াছিলাম, এক মুহূর্তেই আজ তাহা সুস্পষ্ট হইয়া উঠিল। আমার সেই চওড়া বুক কই ? আমার সে বিশ্বাস কোথায় ? আমার সেই রাম নামের অভেদ্য কবচ কই ? আমি ত ইন্দ্র নই যে, এই প্রেতভূমিতে নিঃসঙ্গ দাড়াইয়া, চোখ মেলিয়া, প্রেতাত্মার গেণ্ডুয়া খেলা দেখিব ? মনে হইতে লাগিল, একটা জীবন্ত বাঘ-ভালুক দেখিতে পাইলেও বুঝি বাচিয়া যাই ৷ হঠাৎ কে যেন পেছনে দাড়াইয়া আমার ডান কানের উপর নিশ্বাস ফেলিল। তাহ এমনি শীতল যে তুষারকণার মত সেইখানেই জমিয়া উঠিল। ঘাড় ন তুলিয়াও স্পষ্ট দেখিতে পাইলাম, এ নিশ্বাস যে নাকের মস্ত ফুটাটা হইতে বাহির হইয়া আসিল, তাহাতে চামড়া নাই, মাংস নাই, এক ফোটা রক্তের সংস্রব পর্য্যন্ত নাই— কেবল হাড় আর গহবর। স্বমুখে, পিছনে, দক্ষিণে, বামে অন্ধকার। স্তন্ধ নিশীথ রাত্রি র্য বা করিতে লাগিল। আশে-পাশে হা-হুতাশ ও দীর্ঘশ্বাস ক্রমাগতই যেন হাতের কাছে ঘেষিয়া আসিতে লাগিল। কানের উপর তেমনি কনকনে ঠাণ্ড নিশ্বাসের বিরাম নাই। এইটাই সৰ্ব্বাপেক্ষ আমাকে অবশ করিয়া আনিতে লাগিল। মনে হইতে লাগিল, সমস্ত প্রেতলোকের ঠাণ্ডা হাওয়া যেন এই গহবরটা দিয়াই বহিয়া আসিয়া আমার গায়ে লাগিতেছে । এত কাণ্ডের মধ্যেও কিন্তু এ কথাটা ভুলি নাই যে, কোনমতেই আমার চৈত্তত্ব হারাইলে চলিবে না। তাহা হইলে মরণ অনিবাৰ্য্য। দেখি, ভান পাট ঠক্ ঠক্‌ করিয়৷ কঁাপিতেছে । থামাইতে গেলাম, থামিল না! লে যেন জামান্থ পা নয় । Եվք