পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (প্রথম সম্ভার).djvu/৯৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শ্ৰীকান্তু লাগিলাম, কেমন করিয়া পথের উপরই একটা রাত্রিচর পাখি বাপ, বলিয়া উড়িয়া গেল ; কেমন করিয়া শিশুকণ্ঠে শকুনশিশু শিমুলগাছের উপর গোড়াইয়া-গৌঙাইয়া কঁদিতে লাগিল, কেমন করিয়া হঠাৎ ঝড় উঠিল এবং মড়ার মাথাগুলো দীর্ঘশ্বাস ফেলিতে লাগিল এবং সকলের শেষে কে যেন আমার পিছনে দাড়াইয়া অবিশ্রাম তুষার শীতল নিশ্বাস আমার ডান কানের উপর ফেলিতে লাগিল। আমার বলা শেষ হইয়া গেল, কিন্তু বহুক্ষণ পৰ্য্যন্ত কাহা ে মুখ দিয়া একটা কথা বাহির হইল না। সমস্ত র্তাবুটা স্তব্ধ হইয়া রহিল। অবশেষে সই প্রবীণ ব্যক্তিটি একটা সুদীর্ঘ নিশ্বাসু ত্যাগ করিয়া আমার কাধের উপর একটা হাত রাখিয়া ধীরে ধীরে কহিলেন, বাবুজী, আপনি যথার্থ ব্রাহ্মণসন্তান বলিয়াই কাল প্রাণ লইয়া ফিরিয়া আসিয়াছিলেন, কিন্তু আর কেহ হইলে পারিত না । কিন্তু আজ হইতে এই বুডাব শপথ রহিল বাবুজী, আর কখনো এরূপ দুঃসাহস করিবেন না। আপনার পিতামাতার চরণে আমার কোট কোট প্রণাম—এ শুধু তাদেরই পুণ্যে আপনি বাচিয়াছেন। এই বলিয়। সে ঝোকের মাথায় খপ করিয়া আমার পায়েতেই হাত দিয়া ফেলিল । আগে বলিয়াছি, এই লোকটি কথা কহিতে জানে । এইলার সে কথা শুরু করিল । চোখের তারা, ভুরু, কখনো সংকুচিত, কখনো প্রসারিত, কখনো নির্বাপিত, কখনো প্রজালিত করিয়া, সে শকুনির কান্না হইতে আরম্ভ করিয়া কানের উপর নিশ্বাস ফেলার এমনি সূক্ষাতিসূক্ষ্ম ব্যাখ্যা জুড়িয়া দিল যে, দিনেব বেলা এতগুলা লোকের মধ্যে বসিয়াও আমার পর্য্যন্ত মাথার চুল কাটা দিয়া খাড়া হইয়া উঠিল। কাল সকালের মত আজও কখন যে পিয়ারী নিঃশব্দে ঘেষিয়া আসিয়া বসিয়াছিল, তাহা লক্ষ্য করি নাই। হঠাৎ একটা নিশ্বাসের শব্দে ঘাড় ফিরাইয়া দেখি, সে আমার ঠিক পিঠের কাছে বসিয়া নির্নিমেষ চোখে বক্তার মুখের পানে চাহিয়া আছে। এবং তাহার নিজের দুটি মিগ্ধোজ্জল গণ্ডের উপর ঝরা-অশ্রুর ধারণ দুইটি শুকাইয়া ফুটিয়া রহিয়াছে। কখন কি জন্য যে চোখের জল গড়াইয়াছিল, এ বোধ করি সে টের পায় নাই ; পাইলে মুছিয়া ফেলিত । কিন্তু সেই অশ্রুকলুষিত তদগত মুখখানি পলকের দৃষ্টিপাতেই আমার বুকের মধ্যে আগুনের রেখায় আকিয় গেল। গল্প শেষ হইলে সে উঠিয়া দাড়াইল এবং কুমারজীকে একটা সেলাম করিয়া, অনুমতি লইয়া নিঃশব্দে ধীরে ধীরে বাহির হইয়া গেল । আজ সকালেই আমার বিদায় লইবার কথা ছিল কিন্তু শরীরটা ভাল ছিল ন৷ বলিয়া, কুমারজীর অনুরোধ স্বীকার করিয়া ও-বেলায় যাওয়াই স্থির করিয়া নিজেদের তাবুতে ফিরিয়া আসিলাম। এতদিনের মধ্যে আজ এই প্রথম পিয়ারীর আচরণে ভাবাস্তর লক্ষ্য করিলাম। এতদিন সে পরিহাস করিয়াছে, বিদ্ধপ

  • \o