পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (ষষ্ঠ সম্ভার).djvu/১০৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্রহ পাশ ফাস্ট ডিভিসনে। আমার মাকেও হার মানিয়েচ। কার সাধ্য বলে তোমাকে ম্লেচ্ছ, স্লেচ্ছদের ইস্কুল-কলেজে পড়ে বি. এ. পাশ করেচ । এবার তা হলে খাবার আনি ? আনে । কিন্তু তার আগে এগুলো রেখে এসোগে, বলিয়া বিপ্রদাস কোশাকুশি প্রভৃতি দেখাইয়া দিল । 赎》 এ আর আমাকে বলে দিতে হবে না মশাই জানি, বলিয়া পূজার পাত্রগুলি সে হাতে তুলিয়া লইয়াছে এমন সময়ে ঘরের বাহিরে বারান্দায় অনেকগুলি উচুগোড়ালি জুতার খুট, খুট, শব্দ একসঙ্গে কানে আসিয়া পৌঁছিল, এবং পরক্ষণে অন্নদা দ্বারের কাছে মুখ বাড়াইয়া বলিল, বন্দনাদিদি, তোমার মামীম – মাসী এবং আরও দুই তিনটি অল্প-বয়সী মেয়ে একেবারে ভিতরে আসিয়া পড়িলেন, বিপ্রদাস দাড়াইয়া উঠিয়া অভ্যর্থনা করিল, আসুন । মাসী বলিলেন, নীচ থেকেই খবর পেলুম বিপ্রদাসবাৰু ভালো আছেন— বিপ্রদাস কহিল, হুঁ, আমি ভাল আছি । আগন্তুক মেয়ের বন্দনাকে দেখিয়া যৎপরোনাস্তি বিক্ষিত হইল, পায়ে জুতা নাই, গায়ে জামা নাই, ভিজা চুলে গরদের শাড়ি ভিজিয়াছে। এলো, কালে চুলের রাশি পিঠের পরে ছড়ানো, দুই হাতে পূজোর জিনিষ-পত্র, তাহার এ মূৰ্ত্তি তাহাদের শুধু অদৃষ্টপূৰ্ব্ব অপরিচিত নয়, অভাবনীয়। বন্দন বলিল, আপনারা দোর ছেড়ে একটু সরে দাড়ান, এগুলি রেখে আসিগে । একটি মেয়ে বলিল, ছোয়া যাবে বুঝি ? ই, বলিয়া বন্দনা চলিয়া গেল । ক্ষণেক পরে সে সেই বেশেই ফিরিয়া আসিয়া বিপ্রদাসের চেয়ারের ধার ঘেধিয়া দাড়াইল। মাসী বলিলেন, আমাদের না জানিয়ে তুমি চলে এলে সেজন্যে রাগ করিনে, কিন্তু আজ তোমার বোনের বিয়ে—তোমাকে যেতে হবে। মেয়ে দু'টি বলিল, আমরা আপনাকে ধরে নিয়ে যেতে এসেচি। বন্দন বলিল, না মালীম, আমার যাওয়া হবে না। সে কি কথা বন্দনা ! না গেলে প্রকৃতি কত দুঃখ করবে জানো ? জানি, তবু আমি যেতে পারবে না। শুনিয়া মাসী বিস্ময় ও ক্ষোভে অধীর হইয়া বলিলেন, কিন্তু এই জন্যেই তোমার বোম্বায়ে যাওয়া হ’ল না—এই জন্যেই তোমার বাবা আমার কাছে তোমাকে রেখে গেলেন। তিনি শুনলে কি বলবেন বলো ত ? সেই মেয়েটি বলিল, তা ছাড়া সুধীরবাবু-মিস্টার ডাটা ভারি রাগ করেচেন। আপনার চলে আসাটা তিনি মোটে পছন্দ করেননি । ৯৬