পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (ষষ্ঠ সম্ভার).djvu/১০৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ শুনিয়া বন্দন নিজেও আশ্চৰ্য্য হইল, বলিল, কে শেখালে আমার মনে নেই মুখুয্যেমশাই, বলিয়া একটু চুপ করিয়া কহিল, বোধ হয় কেউ শেখায়নি। আমার আপনিই মনে হচ্চে, আপনাকে সেবা করার এসব অপরিহার্য্য অঙ্গ, না করলেই ক্রটি হবে। বলিয়া সে চলিয়া গেল। { বিকালের দিকে অভ্যস্ত এবং যথোচিত সাজ-সজ্জা করিয়া বন্দন বিপ্রদাসের ঘরের খোলা দরজার সম্মুখে দাড়াইয়া বলিল, মুখুয্যেমশাই, চললুম বোনের বিয়ে দেখতে । মাসী ছাড়লেন না বলেই যেতে হচ্চে । বিপ্রদাস কহিল, আশীৰ্ব্বাদ করি তুমিও যেন শীঘ্র এই অত্যাচারের শোধ নিতে পারে। তখন ঐ মাসীকে পাঞ্জাব থেকে হিচড়ে বোম্বায়ে টেনে নিয়ে যেও । মাসীর ওপর রাগ নেই, কিন্তু আপনাকে হিচড়ে টেনে নিয়ে যাবো । ভয় নেই, গাড়ি-ভাড়া আমরাই দেবো, আপনার নিজের লাগবে না । এই বলিয়া বন্দন হাসিয়া কহিল, ফিরতে আমার রাত হবে, কিন্তু সমস্ত ব্যবস্থা করে গেলুম, অন্যথা হলে এসে রাগ করবো । করবে বই কি ! না করলেই সকলে আশ্চৰ্য্য হবে। ভাববে, শরীর ভালো নেই, বিয়ে-বাড়িতে খেয়ে বোধ হয় অস্থখ করেচে। বদন হাসিমুখে মাপা নাড়িয়া বলিল, হয়েচে আমার গুণ-ব্যাখ্যা করা। কিন্তু সে কথা যাক, আপনি সন্ধ্যে-আহ্নিক করতে নীচে যালেন না যেন । অমুদি এই ঘরেই সব এনে দেবে। তার আধ ঘণ্টা পরেই ঠাকুর দিয়ে যাবে খাবার, এক ঘণ্ট। পরে বড় ওষুধ দিয়ে আলো নিবিয়ে ঘরের দরজা বন্ধ করে চলে যাবে। এই হুকুম সকলকে দিয়ে গেলুম। বুঝলেন ? হা বুঝেছি। তবে চললুম। যাও। কিন্তু চমৎকার মানিয়েচে তোমাকে বন্দন, এ কথা স্বীকার করবোই। কারণ, যে পোষাকটা পংেচো এইটেই হ’লো তোমার স্বাভাবিক, যেটা এখানে পরে থাকে৷ সেটা কৃত্ৰিম । সে কি কথা মুখুয্যেমশাই –ওরা বলে মেয়েদের জুতো পর আপনি দেখতে পারেন না ? ওরা ভুল বলে, যেমন বলে তোমার হাতে আমি খেতে পারিনে । বন্দন বিক্ষিত হইয়া প্রশ্ন করিল, ভুল হবে কেন মুখুয্যেমশাই, আমার হাতে খেতে সত্যিই ত আপনার আপত্তি ছিল। বিপ্রদাস বলিল, আপত্তি ছিল, কিন্তু আপত্তিটা সত্যিকারের হলে সে আজও থাকতে, যেতে না !