পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (ষষ্ঠ সম্ভার).djvu/১৩৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিপ্রদাস মশাইকে নিয়ে আমি বলরামপুরে যাবো এর বেশি তোমাকে বলতে পারবো না । পিসীমা রাগ করে উঠে গেলেন। আমি বললুম, আমাকে সঙ্গে নিয়ে যাবেন ? আমার ভারি ইচ্ছে করে ঐ-সব আচার-অনুষ্ঠান চোখে দেখি । বনানা বললেন, কিন্তু সে-সব যে কুসংস্কার অশোকবাবু চোখে দখলেও যে আপনাদের জাত যায়। বললুম, যদি আপনার না যায় ত আমার যাবে না। আর যদি যায়ু ত দুজনের এক সঙ্গেই জাত যাক, আমার কোন ক্ষতি নেই। বন্দনা বললেন, আপনি ত বিশ্বাস করেন না, সে-সব চোখে দেখলে যে মনে মনে হাসবেন । বললুম, আপনিই কি বিশ্বাস করেন নাকি ? তিনি বললেন, না করিনে, কিন্তু মুখুযোমশাই করেন। আমি কেবল আশা করি তার বিশ্বাসই যেন একদিন আমারও সত্যি বিশ্বাস হয়ে ওঠে। বিপ্রদাসবাবু, আপনাকে বন্দন মনে মনে পূজো করে, এত ভক্তি সে জগতে কাউকে করে না । খবরটা অজানা নয়, নূতনও নয়, তথাপি অপরের মুখে শুনিয়া তাহার নিজের মুখ একেবারে ফ্যাকাশে হইয়া গেল । ক্ষণেক পরে প্রশ্ন করিল, আপনাদের যে বিবাহ-প্রস্তাব হয়েছিল সে কি স্থির হয়ে গেছে ? বন্দন সম্মতি দিয়েচেন ? না । কিন্তু অসম্মতি জানান নি । এটা আশার কথা অশোকবাবু চুপ করে থাকাটা অনেক ক্ষেত্রেই সন্মতির চিহ্ন । অশোক সকৃতজ্ঞ-চক্ষে ক্ষণকাল চাহিয়া থাকিয়া বলিল, নাও হতে পারে। অন্ততঃ নিজে আমি এখনো তাই মনে করি। একটু থামিয়া কহিল, মুস্কিল হয়েছে এই যে আমি গরীব, কিন্তু বন্দন। ধনবর্তী ! ধনে আমার লোভ নেই তা নয়, কিন্তু পিসীমার মতো ঐটেই আমার একমাত্র লক্ষ্য নয়। এ কথা বোঝাবো কি করে যে পিসীমার সঙ্গে আমি চক্রাস্ত করিনি । এই লোকটির প্রতি মনে মনে বিপ্রদাসের একটা অবহেলার ভাব ছিল, তাহার বাক্যের সরলতায় এই ভাবটা একটু কমিল সদয়কণ্ঠে কহিল, পিসির ষড়যন্ত্রে আপনি যে যোগ দেননি সত্যি হলে একথা বন্দনা একদিন বুঝবেই, তখন প্রসন্ন হতেও তার বিলম্ব হবে না, ধনের পরিমাণ নিয়েও তখন বাধা ঘটবে না । অশোক উৎমুক-কণ্ঠে প্রশ্ন করিল, এ কি আপনি নিশ্চয় জানেন বিপ্রদাসবাৰু ? ইহার জবাব দিতে গিয়া বিপ্রদাস দ্বিধায় পড়িল, একটু ভাবিয়া বলিল, ওর যতটুকু জানি তাইতে মনে হয় ।