শরৎ-সাহিত্য-সংগ্রহ অশোক কহিল, আমার কি মনে হয় জানেন ? মনে হয়, ওঁর নিজের প্রসন্নতার চেয়েও আমার ঢের বেশী প্রয়োজন আপনার প্রসন্নতায় । সে যেদিন পাবো, আমার না-পাবার কিছু থাকবে না । বিপ্রদাস সহাস্তে কহিল, আমার প্রসন্ন দৃষ্টি দিয়ে স্বামী নিৰ্ব্বাচন করবে এমন অদ্ভূত ইঙ্গিত আপনাকে দিলে কে-বন্দনা নিজে ? যদি দিয়ে থাকে ত নিছক পরিহাস করেচে এই কথাই কেবল বলতে পারি অশোকবাবু! না পরিহাস নয়, সত্য । কে বললে ? অশোক এক মুহূৰ্ত্ত নীরব থাকিয়া কহিল, এ-সব মুখ দিয়ে বলার বস্তু নয়, বিপ্রাসবাৰু। সেদিন মাসীমার সঙ্গে ঝগড়া করে বন্দন আমার ঘরে এসে ঢুকলেন— এমন কখনো করেন না—একটা চৌকি টেনে নিয়ে বসে বললেন, আমাকে বোম্বায়ে পৌছে দিয়ে আসতে হবে। বললুম, যখনি হুকুম করবেন তখনি প্রস্তুত । বললেন, যাচ্চি বলরামপুরে, সময় হলে তার পরে জানাবো। বললুম, তাই জানাবেন, কিন্তু মাসীমাকে অমন চটিয়ে দিলেন কেন ? তাদের ঐ-সব পূজো-পাঠ, হোম-জপ, ঠাকুর-দেবতা সত্যিই ত আর বিশ্বাস করেন না, তবু বললেন, বিশ্বাস করতে পেলে বেঁচে যাই । কেন বললেন ও কথা ? বনানা বললেন, মিথ্যে বলিনি অশোকবাবু, ওঁদের মতো সত্য বিশ্বাসে ঐ-সব যদি কখনো গ্রহণ করতে পারি আমি ধন্য হয়ে যাই। মুখুয্যেমশায়ের অমুখে সেবা করেছিলুম, তার কাছে একদিন বিশ্বাসের বর চেয়ে নেবো । তার পরে শুরু হলো আপনার কথা । এত শ্রদ্ধা যে কেউ কাউকে করে, কারো শুভ-কামনায় কেউ যে এমন অমৃক্ষণ মগ্ন থাকতে পারে এর আগে কখনো কল্পনা ও করিনি। কথায় কথায় তিনি একদিনের একটা ঘটনার উল্লেখ করলেন। তখন আপনি অস্বস্থ, আপনার পুজো-আহিকের আয়োজন তিনিই করেন। সেদিন বেলা হয়ে গেছে, তাড়াতাড়ি আসতে কি একটা পায়ে ঠেকলে’, যতই নিজেকে বোঝাতে চাইলেন ও কিছু নয়, ওতে পূজোর ব্যাঘাত হবে না, ততই কিন্তু মন অবুঝ হয়ে উঠতে লাগলো পাছে কোথা দিয়েও আপনার কাজে ক্রটি স্পর্শ করে। তাই আবার স্বান করে এসে সমস্ত আয়োজন তাকে নূতন করে করতে হ’লো। আপনি কিন্তু সেদিন বিরক্ত হয়ে বলেছিলেন, বন্দন, সকালে যদি তোমার ঘুম না ভাঙে ত অন্নদাদিদিকে দিও পূজোর সাজ করতে। মনে পড়ে বিপ্রদাসবাৰু? বিপ্রদাস মাথা নাড়িয়া বলিল, পড়ে। অশোক বলিতে লাগিল, এমন কতদিনের কত ছোট-খাটে। বিষয় গল্প করে বলতে বলতে সদিন রাত্রি অনেক হয়ে গেল, শেষে বললেন, মাসী তাদের কুসংস্কারের খোট দিলেন, আমি নিজেও একদিন দিয়েচি অশোকবাবু-কিন্তু আজ কোনট ১২*
