পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (ষষ্ঠ সম্ভার).djvu/১৩৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিপ্রদাস দয়াময়ী প্রশংসমান চক্ষে নীরবে চাহিয়া বুহিলেন । বন্দনা কহিল, অক্ষুদির বাড়িয়ে বলা স্বভাব মা, নইলে সত্যিই আমি কিছু জানিনে। যা একটু শিখেচি সে শুধু মুখুয্যেমশায়ের সেবা করে। অন্নদা বলিল, সেযে কি সেবা মা সে শুধু আমি জানি। হঠাৎ একদিন কি বিপদেই পড়ে গেলুম। বাড়িতে কেউ নেই, বাম্বর অম্বথের তার পেয়ে ৰিজু চলে এসেছে এখানে, দত্তমশাই গেছেন ঢাকায়; বিপিনের হ’ল জর। প্রথম দুটো দিন কোনমতে কাটলো, কিন্তু তার পরের দিন জর গেল ভয়ানক বেড়ে । ডাক্তার ডেকে পাঠালুম, সে ওষুধ দিলে, কিন্তু ভয় দেখালে চতুগুণ। মুখু মেয়েমানুষ, কি যে করি, তোমাদেরও খবর দিতে পারিনে, বিপিন করলে মান,-আকুল হয়ে ছুটে গেলুম বন্দনার কাছে ওঁর মাসীর বাড়িতে। কেঁদে বললুম, দিদি, রাগ করে থেকে না, এসো। তোমার মুখুয্যেমশাইয়ের বড় অমুখ । বন্দনাদিদি যেমন ছিলেন তেমনি এসে আমার গাড়িতে উঠলেন, মাস্টীমাকে বলবারও সময় পেলেন না । বাড়ি এসে বিপিনের ভার নিলেন । দিন-রাতে একটি ঘণ্টাও সে ক'টা দিন উনি জিরোতে পাননি। কেবল ওষুধ খাওয়ানোই তো নয়, সকালে পূজোর সাজ থেকে আরম্ভ করে রাত্তিরে মশারি ফেলে শুইয়ে আসা পৰ্য্যস্ত যা-কিছু সমস্ত। এখন বন্দনাদিদি মুদি ওষুধ দিতে আর না চায় মা, অন্যথা করে কাজ নেই, ওতেই বিপিন মুস্থ হয়ে উঠবে। বিপ্রদাস তৎক্ষণাৎ সায় দিয়া গম্ভীর হইয়া বলিল, সত্যিই সুস্থ হয়ে উঠবো মা, তোমরা ওকে আর বাধা দিও না, ওর স্ববুদ্ধি হোক, আমাকে ওষুধ গেলানো বন্ধ করুক। আমি কায়মনে আশীৰ্বাদ করবো, বনান রাজ-রাণী হোক । দয়াময়ী নীরবে চাহিয়া রহিলেন। তাহার দুই চক্ষু দিয়া যেন স্নেহ ও মমতা উছলিয়া পড়িতে লাগিল । ঝি আসিয়া কহিল, মা, বৌদিদি বলচেন কলকাতা থেকে যে-সব জিনিসপত্র এখন এলো কোন ঘরে তুলবেন ? দয়াময়ী জবাব দিবার পূৰ্ব্বেই বন্দন বলিল, মা, আমি আপনার ম্লেচ্ছ-মেয়ে বলে আপনার এতবড় কাজে কি কোন ভারই পাবো না ; কেবল চুপ করে বসে থাকবো ? এমন কত জিনিস তো আছে যা আমি ছুলেও ছোয়া যায় না । দয়াময়ী তাহার হাত ধরিয়া একেবারে বুকের কাছে টানিয়া আনিলেন, আঁচল হইতে একটা চাবির গোছা খুলিয়া তাহার হাতে দিয়া বলিলেন, চুপ করে তোমাকে বসে থাকতেই বা দেব কেন মা ? এই দিলুম তোমাকে আমার আপন ভাড়ারের চাবি যা বৌমা ছাড়া আর কাউকে দিতে পারিনে। আজ থেকে এ ভার রইলো তোমার । ללאצ