পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (ষষ্ঠ সম্ভার).djvu/১৪১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিপ্রদাস কহিলেন, ভার আমি ফিরে নেবে না মা, তোমাকেই এ বইতে হবে ; কিন্তু এখানে আর নয়, ভেতরে চলে, তোমার কাজ তোমাকে আমি বুঝিয়ে দিইগে। এই বলিয়া হাত ধরিয়া টানিয়া লইয়া গেলেন । সেদিন বন্দন! এবাড়িতে ঘন্টা-কয়েক মাত্র ছিল, কোথায় কি আছে দেখিবার সুযোগ পায় নাই, আজ দেখিল মহলের পর মহলের যেন শেষ নাই। আশ্রিত আত্মীয়ের সংখ্যা কম নয়, বউ-ঝি নাতি-পুতি লইয়া প্রত্যেকের এক-একটি সংসার। ওদিকটায় আছে কাছারি-বাড়ি ও তাহার আনুষঙ্গিক যাবতীয় ব্যবস্থা, কিন্তু এ অংশে আছে ঠাকুরবাড়ি, রান্নাবাড়ি, দয়াময়ীর বিরাট গোশালা এবং উচ্চ প্রাচীরবেষ্টিত বাগান ও পুষ্করিণী। দ্বিতলের পুবের ঘরগুলো দয়ামীর, তাহারই একটার সম্মুখে বন্দনাকে আনিয়া তিনি বলিলেন, মা, এই ঘরটি তোমার, এরই সব ভার রইলো তোমার উপর। ওধারের বারানায় বসিয়া স উী ও মৈত্রেয়ী কি কতগুলা দ্রব্য মনঃসংযোগে পরীক্ষা করিতেছিল, দয়াময়ীর কণ্ঠস্বরে মুখ তুলিয়া চাহিল, এবং বন্দনাকে দেখিতে পাইয়া দুজনেই কাজ ফেলিয়া কাছে আসিয়া দাড়াইল । সে যে সত্যিই আসিবে এ প্রত্যাশা কেহ করে নাই। দিদির পায়ের ধূলা লইয়া বন্দনী মৈত্রেীকে নমস্কার করিল। মা বলিলেন, আমার এই মেচ্ছ-মেয়েটিও কোন একটা কাজের ভার চায় বেীমা, চুপ করে বসে থাকতে ও নারাজ। তোমাদের দিয়েচি নানা কাজ, ওকে দিলুম আমার এই ভাড়ারের চাবি । মৈত্রেয়ী জিজ্ঞাসা করিল, এ ভাড়ারে কি আছে মা ? আছে এমন সব জিনিস যা ম্লেচ্ছ-মেয়েতে ছুলেও ছোয়া যায় না। এই বলিয়া দয়ামী সকৌতুকে হাসিয়া বন্দনাকে দিয়া ঘর খুলাইয়া সকলে ভিতরে আসিয়া দাড়াইলেন । মেঝের উপর থরে থরে সাজানো রূপার বাসন, ব্রাহ্মণ-পণ্ডিতদের মৰ্য্যাদা দিতে হইবে। কলিকাতা হইতে ভাঙাইয়া টাকা সিকি প্রভৃতি আনানো হইয়াছে, থলিগুলি স্তুপাকার করিয়া একস্থানে রাখা : গরদ প্রভৃতি বহুমূল্য বস্ত্ৰসকল বস্তাবন্দী হইয়া এখনো পড়িয়া, খুলিয়া দেখার অবসর ঘটে নাই,—এ-সকল ব্যতীত দয়াময়ীর আলমারী সিন্দুকও এই ঘরে। হাত দিয়া দেখাইয়া হাসিয়া বলিলেন, বন্দনা, ওর মধ্যেই রয়েচে আমার যথাসৰ্ব্বস্ব, ওর পরেই দ্বিজুর আছে সবচেয়ে লোভ। ওইখানেই পাহারা দিতে হবে মা তোমাকে সবচেয়ে বেশি। আমার মতো তোমাকেও যেন ফাকি দিতে ও না পারে । বদনার বিপন্ন মুখের পানে চাহিয়া সতী ভগিনীর হইয়া বলিল, এত বড় । কাজের ভার দেওয়া কি ওকে চলবে মা ? অনেক টাকা-কড়ির ব্যাপার—তাহার কথাটা শেষ হইবার পূৰ্ব্বেই দয়ামী বলিলেন, অনেক টাকাকড়ির ব্যাপার বলেই ১৬৩