পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (ষষ্ঠ সম্ভার).djvu/১৪৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ প্রত্যাবৰ্ত্তনের পথ নাই—পরিণাম ইহার দৈবের মতই অমোঘ, নিৰ্ম্মম ও অনন্তগতি । তথাপি নিজেকে শাসন করিতে পারিলেন না, অদম্য ক্রোধ ও অভিমানের ব্যত্যয় তাহাকে সম্মুখের দিকে ঠেলিয়া দিল, কটুকণ্ঠে বলিলেন, এ তোমার অন্যায় জিদ বিপিন । তোমার জন্যে মেয়ে-জামাইকে জন্মের মত পর করে দেব এ হয় মা বাছা । তোমার যা ইচ্ছে করগে । শশধর, এস তোমরা আমার সঙ্গে—ওর কথায় কান দেবার দরকার নেই। বাড়ি ওর একার নয়। এই বলিয়া তিনি কল্যাণী ও শশধরকে সঙ্গে লইয়া চলিয়া গেলেন। র্তাহাদের পিছনে পিছনে গেল মৈত্রেয়ী, যেন ইহাদের সে আপন লোক । - মনে হইয়াছিল সতী বুঝি এইবার ভাঙ্গিয়া পড়িবে। কিন্তু তাহার অচঞ্চল দৃঢ়তায় বন্দনা ও বিপ্রদাস উভয়েই বিম্মিত হইল। তাহার চোখে জল নাই, কিন্তু মুখ অতিশয় পাণ্ডুর, বলিল, ঠাকুরজামাই কি করেচেন আমরা জানিনে, কিন্তু অকারণে তুমিও যে এত বড় কাগু করোনি, তা নিশ্চয়ই জানি। ভেবে না, মনে মনে তোমাকে আমি এতটুকু দোষও কোনদিন দেব। বিপ্রদাস চুপ করিয়া রহিল। সতী জিজ্ঞাসা করিল, তুমি কি আজই চলে যাবে ? না, কাল যাবো । আর আসবে না এ-বাড়িতে ? মনে ত হয় ন! । জামি ? বাৰু ? যেতে তোমাদেরও হবে। কাল না পার অন্ত কোন দিন । না, অন্য দিন নয়, আমরাও কালই যাবো । এই বলিয়া সতী বন্দনাকে জিজ্ঞাসা করিল, তুই কি করবি বন্দনা, কালই যাবি ? বনানা বলিল, না। আমি তো ঝগড়া করিনি মেজদি, যে দল পাকিয়ে কালই যেতে হবে । সতী বলিল, ঝগড়া আমিও করিনি বন্দনা, উনিও না ; কিন্তু যেখানে ওঁর জায়গা হয় না সেখানে আমারও না । একটা দিনও না । তোর বিয়ে হলে এ কথা বুঝতিস্ । বন্দন বলিল, বিয়ে না হয়েও বুঝি মেজদি, স্বামীর জায়গা না হলে স্ত্রীরও হয় না। কিন্তু ভুল ত হয়, না-বুঝে তাকেই স্বীকার করা স্ত্রীর কৰ্ত্তব্য, তোমার এ-কথা আমি মানবো না । শাগুড়ির প্রতি সতীর অভিমানের সীমা ছিল না, বলিল, স্বামী থাকলে মানতিল। বলিয়াই অঞ্জ চাপিতে ক্রতপদে প্রস্থান করিল। বদনা কহিল, এ কি করলেন মুখুয্যেমশাই ? মা করে উপায় ছিল না বন্দনা।

    • y.