পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (ষষ্ঠ সম্ভার).djvu/১৬০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ हैं । শশধর একটুখানি হাসির ভান করিয়া বলিল, অথচ, কলকাতার বাড়িটা তো শুনেচি তোমার । দ্বিজদাস কহিল, আমার বাড়িতে দাদার প্রবেশ নিষেধ নাকি ? * শশধর কহিল, তা বলিনি। বরঞ্চ তিনিই যেন এই ভাবটা দেখিয়ে গেলেন । এ-বাড়ি ছেড়েও তো তার যাবার দরকার ছিল না, একটা মিটমাট করে নিলেই তো পারতেন । দ্বিজদাস বলিল, মিটমাটের পথ যদি খোলা ছিল আপনি করে নিলেন না কেন ? আমি করে নেবো ? শশধর অত্যন্ত বিস্ময় প্রকাশ করিরা বলিল, এ কি রকম প্রস্তাব ? অামাকে অপমান করলেন তিনি আর মিটমাট করবো আমি ? মন্দ যুক্তি নয় ! এই বলিয়া সে টানিয়া টানিয়া হাসিতে লাগিল। হাসি থামিলে দ্বিজদাস বলিল, যুক্তি মন্দ দিইনি শশধরবাৰু। মেয়ের কথায় বলে পৰ্ব্বতের আড়ালে থাকা । দাদা ছিলেন সেই পৰ্ব্বত, আপনি ছিলেন তার আড়ালে। এখন মুখোমুখি দাড়ালুম আমি আর আপনি । মান-অপমানের পালা সাঙ্গ হয়ে তো যায়নি—মাত্র শুরু হ’লো । তার মানে ? মানে এই যে, আমি আপনার বাল্যবন্ধু বিপ্রদাস নই—আমি দ্বিজদাস । শশধরের মুখের হাসি ধীরে ধীরে অন্তর্হিত হইল, ভয়ানক গম্ভীর-কণ্ঠে প্রশ্ন করিল, তোমার কথার অর্থ কি বেশ খুলে বল দিকি ? দাদার বন্ধু বলিয়া শশধর ‘তুমি বলিয়া ডাকিলেও দ্বিজদাস তাহাকে আপনি বলিয়াই সম্বোধন করিত, বলিল, আপনার এ-কথা মানি যে অর্থ আজ স্পষ্ট হওয়াই ভালো। আমার দাদা সেই জাতের মানুষ যারা সত্য-রক্ষার জন্যে সৰ্ব্বস্বাস্ত হয়, আশ্রিতের জন্য গায়ের মাংস কেটে দেয়, ওদের আদর্শ বলে কি-এক অদ্ভুত বস্তু আছে যার জন্তে পারে না এমন কাজ নেই,—ওরা একধরণের পাগল,—তাই এই দুর্দশ । কিন্তু আমি নিতান্ত সাধারণ মানুষ, আপনার সঙ্গে বেশি প্রভেদ নেই। ঠিক আপনার মতই আমার হিংসা আছে, ঘৃণা আছে, প্রতিশোধ নেবার শয়তানি বুদ্ধি আছে, সুতরাং দাদাকে ঠকিয়ে থাকলে আপনাকে ও ঠকাবো, তার নাম জাল করে থাকলে স্বচ্ছন্দে আপনাকে জেলে পাঠাবো,—অন্তত: চেষ্টার ক্রটি হবে না যতক্ষণ পৰ্য্যস্ত না দু'পক্ষই একদিন পথের ভিখারি হয়ে দাড়াই। বিজ্ঞ-জনের মূখে শুনি এমনিই নাকি এর পরিণতি। তাই হোক । ... • শশধর উচৈস্বরে বলিয়া উঠিল, মা, শুনেছেন আপনার দ্বিজুর কথা ? ওর যা মুখে আসে বলতে ওকে বারণ করে দিন। দ্বিজদাস বলিল, মাকে নালিশ জানিয়ে লাভ নেই শশধরবাৰু। উনি জানেন 》