পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (ষষ্ঠ সম্ভার).djvu/১৬৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিপ্রদাস জানে। সন্ধ্যার অন্ধকারে নিঃশব্দে বাড়ি ফিরিয়া সোজা গিয়া দাড়াইল বন্দনার গৃহের সম্মুখে, ডাকিল, আসতে পারি? কে, দ্বিজবাৰু? আম্বন। দ্বিজদুাস ভিতরে প্রবেশ করিয়া দেখিল বন্দনার বাক্স গুছানো শেষ হইয়াছে, যাত্রার আয়োজন প্রায় সম্পূর্ণ। কহিল, সত্যিই চললেন তা হলে ? একটা দিনও বেশি রাখা গেল না ? তাহার মুখের দিকে চাহিয়া বন্দনার ইচ্ছা হইল না বলে, তবু বলিতেই হইল,— যেতেই ত হবে, একটা দিন বেশি রেখে আমাকে লাভ কি বলুন ? দ্বিজদাস বলিল, লাভের কথা ত ভাবিনি, শুধু ভেবেচি সবাই গেল-এত বড় বাড়িতে বন্ধু আর কেউ রইলো না । বন্দনা কহিল, পুরনো বন্ধু যায়, নতুন বন্ধু আসে এমনিই জগৎ দ্বিজুবাৰু। সেই আশায় ধৈর্য্য ধরে থাকতে হয়,-চঞ্চল হলে চলে না । দ্বিজদাস উত্তর দিল না, চুপ করিয়া রহিল। বন্দন বলিল, সময় বেশি নেই, কাজের কথা দুটো বলে নিই। শুনেচেন বোধ হয় শশধরবাবু কল্যাণীকে নিয়ে চলে গেছেন ? না শুনিনি, কিন্তু অনুমান করেছিলুম। যাবার পূৰ্ব্বে এক ফোটা জল পর্য্যস্ত তাদের খাওয়াতে পারা গেল না। দু’জনে এসে মাকে প্রণাম করে বললেন, আমরা চললুম। মা বললেন, এসে । তার পর অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে রইলেন । এই বলিয়া বন্দনা নীরব হইল। যে কারণে তাহার যাওয়া, যে-সকল কথা মায়ের সম্মুখে দ্বিজু গত রাত্রে বলিয়াছিল, তাহার উল্লেখ মাত্র করিল না । কয়েক মুহূৰ্ত্ত মৌন থাকিয়া পুনশ্চ কহিল, মা ভারি ভেঙে পড়েচেন। দেখলে মায়া হয়,—লজ্জায় করে কাছে যেন মুখ দেখাতে পারেন না । মৈত্রেী ওঁর যে সেবা করচে বোধ হয় আপন মেয়েতে তা পারে না ! মা সুস্থ হয়ে যদি ওঠেন সে শুধু ওর যত্বে। মেয়েটি বেশ ভাল, কিছুদিন ওকে ধরে রাখার চেষ্টা করবেন এই আমার অনুরোধ । তাই হবে। * দ্বিজুবাবু, যাবার আগে আর একটি অনুরোধ করে যাবো ? করুন । আপনাকে বিয়ে করতে হবে। কেন ? বন্দন বলিল, এই বৃহৎ পরিবার নইলে ছিন্ন-ভিন্ন হয়ে যাবে। আপনাদের 36 on