পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (ষষ্ঠ সম্ভার).djvu/১৮৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিপ্রদাস বাধা ত খুচলে ; আর ত আমার লঙ্গ নেই—কিছুদিন থাকুন না আমার কাছে ? ছুদিন পুজো করি। এই বলিয়া সজল চক্ষে চাহিয়া রহিল—তাহার আকুল কণ্ঠস্বর যেন অন্তর ভেদ করিয়া বাহিরে আসিল । বিপ্রদাস হাসিমুখে চুপ করিয়া রহিলেন। বন্দন বলিল, এই হাসিমুখের মৌনতাকেই আমি সবচেয়ে ভয় করি বড়দা। কি কঠোর আপনার মন, একে না পারা যায় গলাতে, না পারা যায় টলাতে। দেবেন না উত্তর ? বিপ্রদাস এবার হাসিস্থা ফেলিলেন । যেমন স্নিগ্ধ, তেমনি সুন্দর, তেমনি নিৰ্ম্মল । র্তাহাকে এমন করিয়া হাসিতে বন্দনা যেন এই প্রথম দেখিল । বলিল, উত্তর পেলুম, আর আপনাকে আমি পীড়াপীড়ি করব না। কিন্তু মনকে শাস্ত করি কি করে বলে দিন । এ যে কেবলি কেঁদে উঠতে চায়। বিপ্রদাস বলিলেন, মন আপনি শাস্ত হবে বন্দন, যেদিন নি:সংশয়ে বুঝবে তোমার দাদা দুঃখের মাঝে ঝাপ দিতে গৃহত্যাগ করেনি। কিন্তু তার আগে নয় । কিন্তু এ আমি বুঝবো কেমন ক’রে ? শুধু আমাকে বিশ্বাস করে। জানো ত দিদি, আমি মিছে কথা বলিনে। বন্দন চুপ করিয়া রহিল। মিনিট-দুই পর গভীর নিশ্বাস ফেলিয়া বলিল, তাই হবে, আজ থেকে প্রাণপণে বোঝাবো নিজেকে, বড়দা সত্যি কথাই বলে গেছেন, সত্যবাদী তিনি, মিছে কথায় ভুলিয়ে চলে যাননি। যেখানে আছে মানুষের চরম শ্ৰেয়:, সেই তীর্থেই তিনি যাত্রা করেছেন। বিপ্রদাস কহিলেন, হঁ। তোমার মনকে বুঝিয়ে বোলো যা সবচেয়ে সুন্দর সবচেয়ে সত্য, সবচেয়ে মধুর, বড়দ সেই পথের সন্ধানে বার হয়েছেন। তাকে বাধা দিতে নেই, তাকে ভ্রান্ত বলতে নেই, তার তরে শোক করা অপরাধ । বন্ধনার চোখে আবার জল আসিয়া পড়িল, তাড়াতাড়ি মুছিয়া ফেলিয়া বলিল, তাই হবে, তাই হবে । এ-জীবনে আর যদি কখনো দেখা না পাই, তবু বলবো তিনি ভ্রাপ্ত নন, তার তরে শোক করা অপরাধ । পর্দার ফাঁক দিয়া মুখ বাড়াইয়া বিরাজ দত্ত বলিলেন, দিদি, একটা জরুরি কথা আছে, একবার আসতে হবে যে । যাই বিরাজবাৰু। বড়দা, আসি এখন বলিয়া বন্দনা ঘর হইতে বাহির হইয়া গেল । ל לל