পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (ষষ্ঠ সম্ভার).djvu/১৯১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিপ্রদাস বিপ্রদাসের পত্র পাইরা রে-সাহেব এক সপ্তাহের ছুটি লইয়া বলরামপুরে আসিয়া উপস্থিত হইলেন এবং মেয়েকে দ্বিজুর হাতে অর্পণ করিয়া আবার কৰ্ম্মস্থলে ফিরিয়া গেলেন । এ বিবাহে নহবং বাজিল না, বরযাত্রী-কন্যাযাত্রীর বিবাদ বাধিল না, মেয়ের উলু দিল অস্ফুটে, শাক বাজিল চাপ স্বরে,—বাসর-গৃহ রহিল স্তন্ধ, মৌন। নিরাল কক্ষে দ্বিজদাসের বিষন্ন মুখের পানে চাহিয়া বন্দনা প্রশ্ন করিল, কি ভাবচো বল তো ? দ্বিজদাস বলিল, ভাবচি তোমার কথা, ভাবচি আমার চেয়ে তুমি অনেক বড়। কেন ? নইলে পারতে না। সৰ্ব্বনাশ বাচাতে কি দুঃখের পথ হেঁটেই না তুমি আমার কাছে এলে । বন্দন জিজ্ঞাসা করিল, তুমি আসতে না ? न1 ।। বন্দনা বলিল, মিছে কথা। কিন্তু আমি কি ভাবছিলুম জানো ? তোমার গলায় মালা পরিয়ে দিতে দিতে ভাবছিলুম, আমি এমন-কি স্বকৃতি করেছিলুম যাতে তোমার মত স্বামী পেলুম! পেলুম বাস্থকে, মাকে, বড়দাদাকে। আর পেলুম এই বৃহৎ পরিবারের বিপুল ভার। কিন্তু যে সমাজের মেয়ে আমি, তার প্রাপ্য কতটুকু জানো ? দ্বিজদাস কহিল, না । বন্দনা বলিতে গিয়া হঠাৎ থামিয়া গেল। কহিল, কিন্তু আজ নয়। নিজের পরম সৌভাগের দিনে অন্তের দৈন্তকে কটাক্ষ করবো না । অপরাধ হবে । হবে না, তুমি বলো। বন্দনা মাথা নাড়িয়া অস্বীকার করিল, কহিল আজ তুমি ক্লাস্ত, একটু ঘুমোও, তোমার মাথায় আমি হাত বুলিয়ে দিই। মিনিট-দুই পরে বলিল, আমার মেজদির কথা মনে পড়ে? সেদিন বড়দার সঙ্গে তখনি চলে যেতে চাইলেন দেখে বললুম, তুমি ত ঝগড়া করোনি মেজদি, তুমি কেন স্বাবে ? মেজদি বললেন, যেখানে স্বামীর স্থান হয় না, সেখানে স্ত্রীরও না । একটা দিনের জন্যেও না। তোর স্বামী থাকলে একথা বুঝতিস। সেদিন হয়ত ঠিক এ-কথা বুঝিনি, কিন্তু আজ বুঝচি তুমি না থাকলে আমি একটা দিনও সেখানে থাকতে পারিনে। একটু থামিয়া বলিল, এই ত ঘণ্টা-কয়েক আগে পুরুতের সঙ্গে গোট কয়েক শৰ উচ্চারণ করে গেলুম, কিন্তু মনে হচ্ছে যেন আমার দেহের প্রতি রক্তকণাটি পৰ্য্যন্ত বদলে গেচে । ՖԵ Ք