পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (ষষ্ঠ সম্ভার).djvu/২৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিপ্রদাস দ্বিজদাস বলিল, আমার নিজের আপত্তি নেই, কিন্তু টাকা পাব কোথায় ? সেখানে ছেলে পড়িয়েও চলবে না, এবং এত ভার বৌদির ওপরেও চাপাতে পারব না। এ আশা বৃথা । শুনিয়া বন্দন হাসিল । কহিল, দ্বিজুবাবু, এ আপনার রাগের কথা। নইলে যে অর্থ আপনাদের আছে তাতে শুধু নিজে নয়, ইচ্ছে করলে এ গ্রামের অর্ধেক লোককে সঙ্গে নিয়ে যেতে পারেন। বেশ, সে ব্যবস্থা আমি করে দিচ্ছি, আপনি যাবার জন্যে প্রস্তুত হ’ন । দ্বিজু কহিল, সে ব্যবস্থা হবার নয়। টাকা প্রচুর আছে সত্যি, কিন্তু সে-সব দাদার, আমার নয়। আমি দয়ার ওপর আছি বললেও অত্যুক্তি হয় না। বন্দনা পুনরায় হাসিবার চেষ্টা করিয়া কহিল, অত্যুক্তি যে কি এবং কোনটা, সে আমিও বুঝি । কিন্তু এও রাগের কথা । মেজদিদির চিঠিতে একবার শুনেছিলাম যে, যে-সম্পত্তি আপনি নিজে অর্জন করেননি সে নিতে আপনি অনিচ্ছুক। এ কথা ঠিক নয় ? দ্বিজদাস বলিল, যদি ঠিকও হয়, সে মাহুষের ধৰ্ম্ম-বুদ্ধির কথা, রাগের নয়। কিন্তু এ-ই সমস্ত কারণ নয় । সমস্ত কারণটা কি শুনতে পাইনে ? দ্বিজদাস চুপ করিয়া রহিল। বদন ক্ষণকাল তাহার মুখের পানে চাহিয়া থাকিয়া আস্তে আস্তে বলিল, আমি স্বভাবতঃ এত কৌতুহলী নই এবং আমার এই আগ্রহ যে স্বষ্টিছাড়া আতিশয্য সে বোধ আমারও আছে, কিন্তু বোধ থাকলেই সংসারের সব প্রয়োজন মেটে না—অভাব হা করে চেয়ে থাকে ! আপনার কথা আমি এত বেশি শুনেচি যে, আপনি প্রথম যখন ঘরে ঢুকলেন অপরিচিত বলে আপনাকে মনেই হ’ল না, যেন কতবার দেখেচি এমনি সহজে চিনতে পারলুম। মেজদিদিকে এত কথা বলতে পেরেচেন, আর আমাকে পারেন না ? অার কিছু না হোক, তার মত আমিও ত একজন আত্মীয় । কথা শুনিয়া দ্বিজু অবাক হইয়া গেল। এবং অকস্মাৎ সমস্ত ব্যাপারটা মনে পড়িয়া তাহার সঙ্কোচ ও বিস্ময়ের অবধি রহিল না। সম্পূর্ণ অচেনা বয়স্থা কন্যার সহিত নির্জনে এইভাবে আলাপ করার ইতিহাস এই প্রথম, দেয়ালে ঘড়ির দিকে চাহিয়া দেখিল, এক ঘণ্টারও উপর কাটিয়া গিয়াছে, ইতিমধ্যে নীচে কেহ যদি তাহাদের খুজিয়া থাকে এ-বাটতে তাহার জবাব যে কি সে ভাবিয়া পাইল না। হয়ত দাদা বাড়ি ফিরিয়াছেন, হয়ত মায়ের অাহিক সারা হইয়াছে, হঠাৎ সমস্ত দেহ-মন তাহার ব্যাকুল । হইয়া যেন এক মুহূর্ডে সিড়ির দিকে ছটা গেল, কিন্তু কিছুই করিতে না পারির তেমনি স্তন্ধ হইয়া বসিয়া রহিল । ১৯