পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (ষষ্ঠ সম্ভার).djvu/২৮৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ দেবরটির সাড়া পাইয়া উদ্বেগে নারায়ণী উঠিয়া বসিয়া বলিলেন, ওগো, রামকে মানা কর । ও রাম, মাথা খাস আমার, যাপনে—লক্ষ্মী ভাইটি আমার, ছি দাদা, ঝগড়া করতে নেই । রাম কর্ণপাতও করিল না—বাহির হইয়া গেল। পাচ বছরের ভ্রাতু-পুত্র তখনও কাঠিগুলা ধরিয়া বসিয়াছিল, কহিল, খাচা বুনবে না কাক ? বুনবে অখন, বলিয়া রাম চলিয়া গেল। নারায়ণী কপালে করাঘাত করিয়া কঁাদ কাদ হইয়া স্বামীকে উদ্দেশ করিয়া বলিলেন, কেন তুমি ওকে যেতে দিলে ? দেখ কি কাণ্ড বা করে আসে। হামলাল ক্রুদ্ধ ও বিরক্ত হইয়াই ছিলেন, রাগিয়া বলিলেন, আমি কি করব ? তোমার মানা শুনলে না, আমার মানা শুনবে ? হাত ধরলে না কেন ? ও হতভাগার জন্তে আমার একদণ্ডও যদি বাচতে ইচ্ছে করে। নেত্য, লক্ষ্মী মা আমার, দাড়িয়ে থাকিস্নে—ভোলাকে পাঠিয়ে দে গে, বুঝিয়ে-মুঝিয়ে ফিরিয়ে আমুক—সে হয়ত এখনো গরু নিয়ে মাঠে যায়নি। নেত্যকালী ভোলার সন্ধানে গেল । রাম নীলমণি ডাক্তারের বাটতে আসিয়া উপস্থিত হইল। ডাক্তার তখন ডিসপেনসারিতে, অর্থাৎ একটা ভাঙা আলমারির সামনে একটা ভাঙা টেবিলে বসিয়া নিক্তিহাতে ঔষধ ওজন করিতেছিলেন। চার-পাচজন রোগী ই করিয়া তাহাই দেখিতেছিল। ডাক্তার আড়-চোথে চাহিয়া নিজের কাজে মন দিলেন। রাম মিনিট-খানেক চুপ করিয়া থাকিয়া বলিল, বৌদির জর সারে না কেন ? ' ডাক্তার নিক্তিতে চক্ষু নিবদ্ধ করিয়া বলিলেন, আমি কি করব—ওষুধ দিচ্ছি— ছাই দিচ্ছ । পচা ময়দার গুড়োতে অমুখ ভালো হয় । কথা শুনিয়া নীলমণি ওজন নিক্তি সব ভুলিয়া চোখ রাঙা করিয়া বাক্যশূন্ত হইয়া চাহিয়া ধ্বহিলেন। এত বড় শক্ত কথা মুখে আনিবার স্পৰ্দ্ধা যে সংসারে কোন মামুষের থাকিতে পারে, তিনি তাহ জানিতেন না । ক্ষণেক পরে গর্জিয়া উঠিলেন, পচা ময়দার গুড়ে তবে নিতে আসি কেন রে } তোর দাদা পায়ে ধরে ডাকতে পাঠায় কেন রে ? রাম বলিল, এদিকে ডাক্তার নেই, তাই ডাকতে পাঠায় । থাকলে পাঠাত না । লোকগুলো স্তম্ভিত হইয়া শুনিতেছিল, তাহাদিগের পানে চাহিয়া দেখিয়া সে পুনৰ্ব্বার বলিল, তুমি ইতর, বামুনের মান-মৰ্য্যাদা জান না, তাই বলে ফেললে পায়ে ধরে ডাকতে পাঠায়। দাদা কারো পায়ে ধরে না। আসবার সময় বৌদিদি মাথার দিব্যি দিয়ে ফেলেচে, নইলে দাতগুলো তোমার সদ্যই ভেঙে দিয়ে ঘরে যেতুম । ত৷ শোন, ভাল ওষুধ নিয়ে এখুনি এস, দেরী ক’রো না। আজ যদি জর না ছাড়ে ૨૪ જ