পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (ষষ্ঠ সম্ভার).djvu/২৯৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রামের মুমতি রাম তখন ভাত খাইয়া জামা পরিয়া ইস্কুলে চলিয়া গেল । মৃত্যকালী কহিল, তোমার জন্যই ওর সব-রকম বদ অভ্যাস হচ্ছে মা ! অত বড় ছেলেকে কোলে বসিয়ে খাইয়ে দেওয়া কি ! একটু রাগ করলেই খাইয়ে দিতে হবেও আবার কি-কথা ! মারায়ণী একটু হাসিয়া বলিলেন, না হলে খায় না যে। রাত্তিরের লোভ না দেখালে ও ঐখানে একবেলা ঘাড় গুজে বসে থাকতো—খেতে না । মৃত্যকালী বলিল, না, খেত না ! ক্ষিদে পেলে আপনি খেত। অত বড় ছেলে— নারায়ণী মনে মনে অসন্তুষ্ট হইয়া বলিলেন, তোরা ওর বয়সই দেখিস । বড় হলে বুদ্ধি হলে পর আপনিই লজ্জা হবে। তখন আর কোলে বসতে চাইবে না, খাইয়ে দিতে বলবে? - - মৃত্যকালী ক্ষুণ্ণ হইয়া বলিল, ভালর জন্তই বলি মা, নইলে আমার দরকার কি ? বার-তের বছর বয়সে যদি ওর জ্ঞান-বুদ্ধি না হয়, তবে কবে হবে ? নারায়ণী এবার রাগ করিলেন। বলিলেন, জ্ঞান-বুদ্ধি সকল মানুষের এক সময়ে হয় না নেত্য কারো বা দু’বছর আগে, কারো বা দু’বছর পরে হয়। আর হোক ভাল, না হোক ভাল, তোদেরই বা এত দুর্ভাবনা কেন ? • . . নেতা বলিল, ঐ তোমার দোষ মা ও যে কি রকম দুই হয়ে উঠেছে তা ত নিজেই দেখতে পাচ্ছ। পাড়ার লোকে বলে, তোমার আদরেই ও— x * মারায়ণী রুক্ষশ্বরে স্বলিলেন, পাড়ার লোক আদরটাই দেখে, শাসনটা দেখে না ; কিন্তু তুই ত পাড়ার লোক ন’স সমস্ত সকালবেলাটা যে এক পায়ে দাড়িয়ে কাদলে, পচা পুকুরে ডুব দিয়ে এল, ভগবান জানেন, জর হবে না কি হবে, তার পরে কি বলিস উপোস করিয়ে ইস্কুল পাঠিয়ে দিতে ? ঘরে-বাইরে আমার অত গজনা সহ হয় রা, নেতা। বলিতে বলিতে র্তাহার স্বর রুদ্ধ হইয়া চোখ জলে ভরিয়া আসিল, অঁাচল দিয়া তিনি চোখ মুছিলেন। এই কথা লইয়া কাল রাত্রে স্বামীর সঙ্গেও যে সামান্ত কলহ হইয়া গিয়াছিল, সে-কথা মেত্য জানিত না ! অত্যন্ত লজ্জিত ও দুঃখিত হইয়া সে বলিল, ও কি মা, কাদ কেন ? মন্দ কথাত আমি কিছু বলিনি। লোকে বলে, তাই একটু সাবধান করে দেওয়া । aারায়ণী চোখ মুছিয়া বলিলেন, সকল মানুষকে ভগবান একরকম গড়েন না। ও একটু বলেই আমি যার তার কথা চুপ করে সহ করি, কিন্তু আদর দেবার খোটা লোকে দেয় কি করে ? তারা কি চায়, ওকে আমি কেটে নদীর জলে ভাসিয়ে দিয়ে আলি ? তা হলেই বোধ করি তাদের মনস্কামনা পূর্ণ হয়। বলিয়া কোমরূপ উত্তরের এউীক্ষামাত্র না করিয়া ক্রতপদে চলিয়া গেলেন । ՀԵն