পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (ষষ্ঠ সম্ভার).djvu/৩১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিপ্রদাস মৰ্য্যাদা রক্ষা করিয়া সে হাত তুলিয়া একটা নমস্কার করিল বটে, কিন্তু তাহার উপেক্ষাটাই তাহাতে স্পষ্টতর হইয়া উঠিল, কথা কহিল সে পিতার সঙ্গেই, বলিল, তুমি একলা খেতে বসেচ, আমাকে ডেকে পাঠাওনি কেন ? সাহেব মুখ তুলিয়া চাহিলেন, বলিলেন, আমার যে গাড়ির সময় হলো মা, কিন্তু তোমার ত তাড়াতাড়ি নেই। আমি চলে গেলে তোমরা ধীরে-সুস্থে খাওয়া-দাওয়া করতে পারবে । সতী আড়াল হইতে ঘাড় নাড়িয়া ইহার অনুমোদন করিল। বন্দন তাহাকে লক্ষ্য করিয়া কহিল, মেজদি, অতগুলি দামী রূপোর বাসন নষ্ট করলে কেন, বাবাকে এনামেল কিংবা চিনেমাটির বাসনে খেতে দিলেই ত হত ? সাহেবের চিবান বন্ধ হইল। অত্যন্ত সরল-প্রকৃতির মানুষ তিনি, কন্যার কথার তাৎপৰ্য্য কিছুই বুঝিলেন না, ব্যস্ত এবং লজ্জিত হইয়া উঠিলেন—যেন দোষটা তাহার নিজেরই—তাই ত, তাই ত—এ আমি লক্ষ্য করিনি—সতী কোথা গেল— আমাকে ডিসে খেতে দিলেই হত—এঃ– বিপ্রদাসের মুখ ক্রোধে কঠোর ও গম্ভীর হইয়া উঠিল। এতাবৎ এত বড় অপমান করিতে তাহাকে কেহ সাহস করে নাই, এই নবাগত কুটুম্ব মেয়েটি তাহাকে যেমন করিল। বাসন নষ্ট হইবার দুশ্চিন্তা একটা ছলনা মাত্র । আসলে ইহা তাহাদের আচারনিষ্ঠ পরিবারের প্রতি নির্লজ্জ ব্যঙ্গ, এবং খুব সম্ভব তাহাকেই উদ্দেশ করিয়া । এ দুরভিসন্ধি কে তাহার মাথায় আনিয়া দিল বিপ্রদাস ভাবিয়া পাইল না, কিন্তু যেই দিক, ভাল মানুষ ব্যক্তিটিকে উপলক্ষ্য স্থষ্টি করার কদৰ্য্যতায় তাহার বিরক্তির অবধি রহিল না । কিন্তু সে ভাব দমন করিয়া একটুখানি হাসিয়া কহিল, তোমার দিদির কাছে শোনোনি যে, এ গোড়া হিন্দুর বাড়ি ? এখানে এনামেল বল, চিনে-মাটিই বল কিছুই ঢোকবার জো নেই— শোনোনি ? বন্দনা কহিল, কিন্তু দামী পাত্রগুলো ত নষ্ট হয়ে গেল ? সাহেব ব্যাকুল হইয়া বলিয়া উঠিলেন, কিন্তু শুনেছি ঘি মাখিয়ে একটুখানি পুড়িয়ে নিলেই— বিপ্রদাস এ কথায় কান দিল না, যেমন বলিতেছিল তেমনি বন্দনাকেই লক্ষ্য করিয়া কহিল, এ-বাড়িতে রূপোর বাসনের অভাব নেই, কিন্তু কোন কাজে লাগে না । তোমার বাবা সম্বন্ধে আমার গুরুজন, এ-বাড়িতে অত্যন্ত সন্মানিত অতিথি, রূপোর বাসনের যতই দাম হোক, তার মর্য্যাদার কাছে একেবারেই তুচ্ছ ; তোমাদের আসার উপলক্ষ্যে কতকগুলো যদি নষ্ট হয়েই যায়—যাক না। এই বলিয়া একটু মুচকিয়া হাসিয়া কহিল, তোমার দিদির মত তোমারও যদি কোন গোড়াদের বাড়িতে ২৩