পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (ষষ্ঠ সম্ভার).djvu/৩৪৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎসাহিত্য-সংগ্ৰহ ৰগণ গায়ের কাপড়-চোপড় সৰ্ব্বাঙ্গে বেশ করিয়া টানিয়া ৱিা বছৰে ইয়া বলিল, ও-সব কথায় বড় ঝগড়া হয়, ও সব ব’লো না । ঝগড়া হয়—কি করে জানলে ? জানি, আমাদের বাপের বাড়িতে মেজদা ও মেজবোঁ এই নিয়ে নিত্য কলহ করে । আমার ঝগড়া-কলহ ভাল লাগে না । শুনিয়া অমরনাথ উত্তেজিত হইয়া উঠিল। অন্ধকারে হাতবাড়াইয় সে যেন এই কথাটাই এতদিন খুজিতেছিল, হঠাৎ আজ যেন তাহা হাতে ঠেকিল, বলিয়া উঠিল, এস অপর্ণ আমরাও ঝগড়া করি । এমন করে থাকার চেয়ে ঝগডা-কলহ ঢের ভাল । অপর্ণ রিভাবে কছিল, ছি, ঝগড়া কেন করতে যাবে ? তুমি ঘুমোও। তাহার পর অপর্ণ ঘুমাইল কি জাগিয়া রহিল, সমস্ত রাত্রি জাগিয়া থাকিয়াও অমরনাথ বুঝতে পারিল না। প্রত্যুষে উঠিয়া সন্ধ্যা পৰ্য্যন্ত সমস্ত দিন অপর্ণার কাজ-কৰ্ম্মে ও জপে তপে কাটিয়া যায়। এতটুকু রঙ্গরস বা কৌতুকের মধ্যে সে প্রবেশ করে না, দেখিয়া তাহার সমবয়সীরা বিদ্রুপ করিয়া কত কি বলে, ননদের ‘গোসাই ঠাকুর’ বলিয়া পরিহাস করে, তথাপি সে দলে মিশিতে পারিল না, কেবলই তাহার মনে হইতে লাগিল, দিনগুলা মিছা কাটিয়া যাইতেছে। আর এই যে অলক্ষ্য আকর্ষণে তাহার প্রতি শোণিত-বিন্দু সেই পিতৃপ্রতিষ্ঠিত মন্দির-অভিমুখে চুটিয়া যাইবার জন্য পূর্ণিমার উদ্বেলিত পিন্ধুবারির মত হৃদয়ের কুলে উপকূলে অহরহ আছড়াইয়া পড়িতেছে, তাহার সংষম কিসে হইবে ? ঘর-করার কাজে, না ছোট-খাট হাস্ত পরিষ্কাসে । ক্ষুব্ধ অস্ব। চিত্ত তাহার এই যে বিপুল ভ্রান্তি মাথায় করিয়া আপনা-আপনি পাক খাইয়া মরিতেছে, তাহার নিকট স্বামীর আদর ও স্বেচ, পরিজনবর্গের প্রতি-সম্ভাষণ ঘে সিবে কি করিয়া ? কি করিয়া সে বুঝিবে, কুমারীর দেবসেবা দ্বারা নারীত্বের কৰ্ত্তব্যের সবটুকু পরিসর পরিপূর্ণ করা যায় না। অমরনাথের বুঝিবার ভূল - সে উপহার লইয়া স্ত্রীর কাছে আসিয়াছে। বেলা তখন নট-দশটা ৷ স্বানাস্তে অপর্ণ পূজা করিতে যাইতেছিল। গলার স্বর যতটা সম্ভব মধুর করিয়া অমৰনাথ কহিল, অপর্ণা, তোমার জন্যে কিছু উপহার এনেচি দয়া করে নেবে কি ? অপর্ণ হাসিয়া বলিল, নেব বৈ কি !

  • 8●