পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (ষষ্ঠ সম্ভার).djvu/৩৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিপ্রদাস স্টেশনটি বড় ন হইলেও একটি ছোট গোছের ওয়েটি রুম ছিল ; সেখানে গিয়া দেখা গেল, একজন ছোকরা বয়সের বাঙালী-সাহেব ও তাহার স্ত্রী ঘরখানি পূৰ্ব্বাহেই দখলে আনিয়াছেন। সাহেব সম্ভবত: ব্যারিস্টার কিংবা ডাক্তার কিংবা বিলাতী পাশকরা প্রফেসারও হইতে পারেন । এ অঞ্চলে কোথায় আসিয়াছিলেন, সে একটা রহস্য। আরাম-কেদারায় দুই হাতলে পদদ্বয় দীর্ঘপ্রসারিত করিয়া অৰ্দ্ধ-সুপ্ত। আকস্মিক জনসমাগমে মাত্র চক্ষুরুন্মীলন করিলেন—ভদ্রতা-প্রকাশের উদ্যম ইহার অধিক অগ্রসর হইল না। কিন্তু মহিলাটি চেয়ার ছাড়িয়া ব্যস্ত হইয়া উঠিয়া দাড়াইলেন। হয়ত মেমসাহেব হইয়া উঠিতে তখনও পারেন নাই, কিন্তু উচু গোড়ালির জুতা ও পোষাক-পরিচ্ছদের ঘটা দেখিয়া মনে হয়, এ-বিষয়ে চেষ্টার ক্রটি হইতেছে না। ঘরের মধ্যে আর একখানা আরাম-চৌকি ছিল, বন্দন পিতাকে তাহাতে বসাইয়া দিয় নিজে একখানি বেঞ্চি অধিকার করিয়া বসিল এবং অত্যন্ত সমাদরে বিপ্রদাসকে আহবান করিয়া বলিল; জামাইবাবু, মিথ্যে দাড়িয়ে থাকবেন কেন, আমার কাছে এসে বম্বন ! বৃহৎ কাষ্ঠে দোষ নেই, আপনার জাত যাবে না। শুনিয়া বন্দনার পিতা অল্প একটুখানি হাসিলেন, কহিলেন, বিপ্রদাসের ছোয়াছুয়ির বাচ-বিচার কি খুব বেশি না কি । বিপ্রদাস নিজেও হাসিল, বলিল, বাচ-বিচার আছে, কিন্তু কি হলে খুব বেশি হয়, না জানলে এ-প্রশ্নের জবাব দিই কি করে ? বৃদ্ধ কহিলেন, এই ধর বদন যা বললে ? বিপ্রদাস কহিল, উনি না খেয়ে ভয়ানক রেগে আছেন । মেয়ের রাগের মাথায় যা বলে তা নিয়ে আলোচনা হয় না । বন্দন বলিল, আমি রেগে নেই—একটুও রেগে নেই। বিপ্রদাস কহিল, আছ, এবং খুব বেশি রকমই রেগে আছ, নইলে আজ তুমি কলকাতায় না গিয়ে বাড়ি ফিরে যেতে | তা ছাড়া তোমার আপনিই মনে পড়ত যে, এইমাত্র আমরা এক গাড়িড়েই এলাম, জাত গিয়ে থাকলে আগেই গেছে, বেঞ্চিতে বসার কথাটা শুধু তোমার ছল মাত্র। বন্দন বলিল, হোক ছল, কিন্তু সত্য কথা বলুন ত মুখুয্যেমশাই, আমাদের ছোয়াছুয়ি করার জন্যে ফিরে গিয়ে আপনাকে আবার স্বান করতে হবে কি না ? চল না, বাড়ি গিয়ে নিজের চোখে দেখবে ? না । জানেন আপনি, মাকে প্রণাম করতে গেলে তিনি ছোবার ভয়ে দূরে সরে গিয়েছিলেন ? বলিতে বলিতে তাহার মুখ ক্রোধে ও লজ্জায় রাঙা হইয়া উঠিল। २१