পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (ষষ্ঠ সম্ভার).djvu/৩৬৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মুসলিম সাহিত্য-সমাজ স্বলভ নয়। শুকনো পুকুরের নীচে গৰ্ত্ত কেটে সামান্ত একটুখানি পানীয় জল বহু দুঃখে মেলে। আমিনা দরিদ্র মুসলমানের মেয়ে, ছোয়া-চুইর ভয়ে পুকুরের পাড়ে দূরে দাড়িয়ে প্রতিবেশী মেয়েদের কাছে চেয়ে-চিন্তে অনেক দুঃখে বিলম্বে তার কলসীটি পূর্ণ করে বাড়ি ফিরে এলো। এখন ক্ষুধাৰ্ত্ত তৃষ্ণাৰ্ত্ত মহেশ তাকে ফেলে দিয়ে কলসী ভৈঙ্গে ফেলে এক নিশ্বাসে মাটি থেকে জল শুষে খেতে লাগলো। মেয়ে কেঁদে উঠলো। জরগ্রস্ত, পিপাসায় শুষ্ককণ্ঠ গফুর ঘর থেকে বেরিয়ে এলো—এ দৃশ্য তার সইলো না । হি তাহিত জ্ঞানশূন্ত হয়ে যা স্বমুখে পেলে—একখণ্ড কাঠ দিয়ে সবলে মহেশের মাথায় মেরে বসলো। অনশনে মৃতকল্প গরুট বার-দুই হাত-পা ছুড়ে প্রাণত্যাগ করলে । প্রতিবাসীরা এসে বললে, হিন্দুর গায়ে গোহত্যা ! জমিদার পাঠিয়েছেন তর্করত্বের কাছে প্রায়শ্চিত্তের ব্যবস্থা নিতে । এবার তোর ঘরদোর না বেচতে হয় । গফুর দুই হাটুর ওপর মুখ রেখে নিঃশব্দে বসে রইলো। মহেশের শোকে, অমুশোচনায় তার বুকের ভেতরটা পুড়ে যাচ্ছিলো। অনেক রাতে গফুর মেয়েকে তুলে বললে, চল আমরা যাই । মেয়ে দাওয়ায় ঘুমিয়ে পড়েছিল, চোখ মুছে বলল, কোথায় বাবা ? গফুর বললে পুলবেড়ের চটকলে কাজ করতে । আমিন আশ্চৰ্য্য হয়ে চেয়ে রইলে। ইতিপূৰ্ব্বে অনেক দুঃখেও তার বাবা চটকলে কাজ করতে রাজি হয়নি। বাবা বলতো, ওখানে ধৰ্ম্ম থাকে না, মেয়েদের আক্র-ইজত থাকে না—ওখানে কখন নয় । কিন্তু হঠাৎ এ কি কথা ! গফুর বললে, দেরি করিসূনে মা, চল । অনেক পথ হাটতে হবে। আমিনা জল থাবার পাত্র এবং বাবার ভাত খাবার পিতলের বাসনটি সঙ্গে নিতেছিল, কিন্তু বাবা বারণ করে বললে, ওসব থাকু মা, ওতে আমার মহেশের প্রাচিত্তির হবে। তার পরে গল্পের উপসংহারে বইয়ে এইরূপ আছে—“অন্ধকার গভীর নিশীথে সে মেয়ের হাত ধরিয়া বাহির হইল। এ-গ্রামে আত্মীয় কেহ তাঙ্গার ছিল না ; কাহাকেও বলিবার কিছু নাই। আঙ্গিনা পার হইয়া পথের ধারে সেই বাবল-তলায় আসিয়৷ সে থমকিয়া দাড়াইয়া হু-হু করিয়া কাদিয়া উঠিল। নক্ষত্রখচিত কালো আকাশে মুখ তুলিয়া বলিল, আল্লাহ আমাকে যত খুশি সাজা দিয়ে, কিন্তু মহেশ আমার তেই নিয়ে মরেছে। তার চরে খাবার এতটুকু জমি কেউ রাখেনি। যে তোমার দেওয়া মাঠের ঘাস, তোমার দেওয়া তেষ্টার জল তাকে খেতে দেয়নি, তার কম্বর ভূমি কখনো যেন মাফ করে না ।" এই হ'ল গোহতা | এই পড়ে হিন্দুর ছেলের বুকে শেল বিধবে । তার চেয়ে । পদুক প্রেমের ঠাকুর’! তাতে ইহলোকে না হোক তাদের পরলোকে সদগতি হবে। 哆靴*