পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (ষষ্ঠ সম্ভার).djvu/৩৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিপ্রদাস তাহাতে মন বেশ নিশ্চিন্ত হয় না । সে যা হোক, পাঞ্জাবের ব্যারিস্টারসাহেব গার্ডকে ধন্যবাদ দিয়া কহিলেন, আপনি না থাকলে আজ হয়ত আমাদের যাওয়াই ঘটত না । ও—নো ! এ আমার ডিউটি । গাড়ি ছাড়িবার ঘণ্টা পড়িল । বিপ্রদাস নামিবার উপক্রম করিয়া কহিল, আর বোধ হয় আমার সঙ্গে যাবার প্রয়োজন নেই। ওরা আর কিছু করবে না। ব্যারিস্টার বলিলেন, সাহস করবে না। চাকরির ভয় আছে ত ? বন্দনা দরজা আগলাইয়া কহিল, না, সে হবে না। চাকরির ভয়টাই চরম gurantee নয়—সঙ্গে আপনাকে যেতেই হবে । বিপ্রদাস হাসিয়া কহিল, পুরুষ হলে বুঝতে এর চেয়ে বড় gurantee সংসারে নেই। কিন্তু আমি যে কিছুই খেয়ে আসিনি। খেয়ে আমিও ত আসিনি। সে তোমার সখ ! কিন্তু একটু পরেই আসবে হোটেল-ওয়ালা বড় স্টেশন, সেখানে ইচ্ছে হলেই খেতে পারবে । বন্দনা কহিল, কিন্তু সে ইচ্ছে হবে না । উপোস করতে আমিও পারি। বিপ্রদাস বলিল, পেরে কোন পক্ষেরই লাভ নেই-আমি নেবে যাই । ব্যারিস্টারসাহেবকে কহিল, আপনি সঙ্গে রইলেন একটু দেখবেন। যদি আবশ্বক হয় ত— বন্দনা কহিল, চেন টেনে গাড়ি থামাবেন ? সে আমিও পারব। এই বলিয়া সে জানাল দিয়া মুখ বাড়াইয়া বাড়ির চাকরদের বলিয়া দিল, তোমরা মাকে গিয়ে ব’লে যে, উনি সঙ্গে গেলেন। কাল কিংবা পরস্ত ফিরবেন। ট্রেন ছাড়িয়া দিল । বন্দনা কাছে আসিয়া বসিল, কহিল, আচ্ছা মুখুয্যেমশাই আপনি ত একগুয়ে কম নন | কেন ? আপনি যে জোর করে আমাদের গাড়িতে তুললেন, কিন্তু ওয়া-ত ছিল মাতাল, যদি নেমে গিয়ে একটা মারামারি বাধিয়ে দিত ? বিপ্রদাস কহিল, তা হলে চাকরি যেত। বন্দন বলিল, কিন্তু আমাদের কি যেত ? দেহের অস্থি-পঞ্জর। সেটা চাকরির চেয়ে তুচ্ছ বস্তু নয়। বিপ্রদাস ও বন্দন উভয়েই হাসিতে লাগিল, অন্ত মহিলাটিও হঠাৎ একটুখানি হাসিয়া ঘাড় ফিরাইল, শুধু তাহার স্বামী পাঞ্জাবের নবীন ব্যারিস্টার মুখ গভীর করিয়া, মুহিলেন । לס\