পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (ষষ্ঠ সম্ভার).djvu/৫৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ বন্দন মাথা নাড়িয়া সায় দিল, ভাল আছি । মা, হঠাৎ আপনি এসে পড়লেন যে ? - দয়াময়ী বলিলেন, না এসে কি করি বল ত ? অামার একটি পাগলী মেয়ে রাগ করে না খেয়ে চলে এসেচে, তাকে শান্ত করে বাড়ি ফিরিয়ে না নিয়ে গেলে নিজে শান্তি পাই কই মা ? ● বন্দন কুষ্ঠিত-হান্তে কহিল, কি করে জানলেন আমি রাগ করে এসেচি ? দয়াময়ী বলিলেন, আগে ছেলে-মেয়ে হোক, আমার মত তাদের মামুষ করে বড় করে তোল, তখন আপনি বুঝবে মেয়ে রাগ করলে কি করে মায়ে জানতে পারে । কথাগুলি তিনি এমন মিষ্ট করিয়া বলিলেন যে বন্দন আর কোন জবাব না দিয়া হেঁট হইয়া এবার তার পা ছুইয়া প্রণাম করিল। উঠিয়া দাড়াইয়া কহিল, বাবা বড় অস্বস্থ মা । অসুস্থ ? কি হয়েচে তার ? পায়ে আঘাত লেগে কাল থেকে শয্যাগত, উঠতে পারেন না। বলিয়া সে দুর্ঘটনার হেতু বিবৃত করিল। দয়াময়ী ব্যস্ত হইয়। পড়িলেন—চিকিৎসার ত্রুটি হয়নি ত ? চল ত কোন ঘরে তোমার বাবা আছেন আমাকে নিয়ে যাবে । আগে তাকে দেখে আসি গে, তারপর অন্য কাজ । এই বলিয়া তিনি সতীকে সঙ্গে করিয়া বন্দনার পিছনে পিছনে উপরে উঠিয়া রায়সাহেবের ঘরে প্রবেশ করিলেন । আজ র্তাহার পায়ের বেদন বিশেষ ছিল ন, ইহাদের দেখিয়া বিছানায় উঠিয়া বসিয়া নমস্কার করিলেন। দয়াময়ী হাত তুলিয়া প্রতিনমস্কার করিয়া সহাস্তে কহিলেন, বেইমশাই, পা ভাঙলো কি করে, কোথায় ঢুকেছিলেন? সতী ও বন্দনা উভয়েই অন্যদিকে মুখ ফিরাইল, রায়সাহেব নিরীহ মানুষ, প্রতিবাদের স্বরে বুঝাইতে লাগিলেন যে, কোথাও ঢুকিবার জন্য নয়, স্টেশনে প্ল্যাটফর্শ্বে বিনাদোষে এই দুৰ্গতি ঘটিয়াছে। দয়াময়ী হাসিয়া বলিলেন, যা হবার হয়েচে, এখন থাকুন দিন-কতক মেয়েদের জিন্মায় ঘরে বন্ধ। পাছে একটা মেয়েতে শাসন করে না উঠতে পারে তাই আর একটিকে টেনে আনলুম বেয়াই । দুজনে পালা করে দিন কতক সেবা করুক। রায়সাহেব তাহাই বিশ্বাস করিলেন এবং এই অনুগ্রহ ও সহানুভূতির জন্য বহু ধন্যবাদ দিলেন। আবার দেখা হবে—বাই এখন হাত-পা ধুই গে, বলিয়া বিদায় লইয়া দয়াময়ী নিজের ঘরে চলিয়া গেলেন।