পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (ষষ্ঠ সম্ভার).djvu/৭৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিপ্রদাস অজ্ঞাত। শুধু এটুকু জানি তার মনে মৈত্রেয়ী দেবী সৰ্ব্বগুণান্বিতা কন্যা। বলরামপুরের ধনী ও মহামাননীয় মুখুয্যে-পরিবারের অযোগ্য নয়। বন্দন জিজ্ঞাসা করিল, মৈত্রেয়ী দেবী সম্বন্ধে আপনার অভিমতটা কি ? দ্বিজদাস বলিল, এ-বাড়িতে ও-প্রশ্ন অবৈধ । আমি তৃতীয় পক্ষ । প্রথম ও দ্বিতীয় পক্ষ, অর্থাৎ মা ও দাদা যে কোন নারীর গলদেশে আমাকে বন্ধন করে দেবেন তারই কণ্ঠলগ্ন হয়ে আমি পরমানন্দে ঝুলতে থাকব। এই এ-গৃহের সনাতন রীতি, এর পরিবর্তন নেই । তাহার বলবার ভঙ্গীতে বন্দন৷ হাসিয়া ফেলিল, বলিল, আর ধরুন, মৈত্রেীর পরিবর্তে বন্দনার গলদেশেই যদি তারা আপনাকে বেঁধে দেন ? দ্বিজদাস ললাটে কঘিাত করিয়া বলিল, হায় বন্দনা, সে আশা বৃথা ! দুষ্ট রছি পূর্ণচন্দ্র ভক্ষণ করেচে, কোথাকার স্বধীরচন্দ্র লাফ মেরে এসে প্রসাদে আগুন ধরিয়ে দিলে, দ্বিজদাসের স্বর্ণলঙ্কা চোখের সম্মুখে ভস্মীভূত হয়ে গেল। এ প্রসঙ্গ বন্ধ করে কল্যাণি, অভগার হৃদয় বিদীর্ণ হয়ে যাবে। তাহার নাটকীয় উক্তিতে বন্দনা আর একবার হাসিয়া বলিল, সোনার লঙ্কার সবটা ত পোড়েনি দ্বিজুবাবু, অশোক-কাননটা রক্ষে পেয়েছিল। হৃদয় বিদীর্ণ ন হতেও পারে । দ্বিজদাস মাথা নাড়িয়া বলিল, সে আশ্বাস বৃথা, শ্রীরামচন্দ্রের বরাতের জোর ছিল, কিন্তু আমি সৰ্ব্ববাদিসম্মত হতভাগ্য দ্বিজদাস । আমার দগ্ধ অদৃষ্টে সমস্ত আশাই পুড়ে ছাই হয়ে গেছে—কিছুই অবশিষ্ট নেই । না যায়নি । কি যায়নি ? বন্দনা জোর দিয়া বলিল, কিছুই যায়নি । দ্বিজদাস হতভাগ্য বলে বন্দন। হতভাগিনী নয়। আমার অদৃষ্টকে পুড়িয়ে ছাই করে এ সাধ্য স্বধীরের নেই। সংসারে কারও নেই, মায়েরও না আপনার দাদারও না । তাহার শান্ত দৃঢ় কণ্ঠস্বরে দ্বিজদাস অবাক হইয়া চাহিয়া রহিল। চুপ করে রইলেন যে? আমার মনের কথা আপনি টের পাননি? আজ কি এই ছলনা করতে চান ? না, ছলনা করতে চাইনে বন্দনা, অনুমান করেছিলুম তা মানি । কিন্তু সন্দেহও ছিল প্রচুর। বন্দনা কহিল, সে সন্দেহ যেন আজ থেকে যায়। ক্ষণকাল তাহার প্রতি চাহিয়া থাকিয়া বলিল, কিন্তু সন্দেহ আমার ত ছিল না। সেই প্রথম দিন থেকেই না। বাড়ি থেকে রাগ করে চলে এলুম, একল উপরের ঘরের জানালায় দাড়িয়ে ፃ »